
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ধলাই নদীর তীর জেগে উঠেছিল ভক্তদের পদচারণায়। কুয়াশামাখা বাতাসে ভেসে আসছিল হরিনাম কীর্তনের সুর- ‘হরি বল, হরি বল’। চারপাশ যেন ভক্তিরাশিতে ভরে উঠেছিল। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানে সনাতনী চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের আয়োজনে গঙ্গা স্নান ও পূজার্চনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো ২৫ তম কাত্যায়নী পূজা।
কার্তিক মাসজুড়ে ব্রত পালন শেষে মঙ্গলবার রাত থেকেই বাগানের বিভিন্ন মন্দিরে শুরু হয় হরিনাম কীর্তন। আর বুধবার ভোর রাত থেকেই হাজারো ভক্তরা হীরামতি এলাকার ধলাই নদীর তীরে সমবেত হন গঙ্গা স্নান ও দেবী কাত্যায়নীর পূজায় অংশ নিতে। প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে চলে এই পূজা ও ধর্মীয় উৎসব। নদীর ঘাটে গঙ্গাস্নান শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয় খিচুড়ি। ভক্তির সঙ্গে বিনম্রতায় সবাই গ্রহণ করেন সেই প্রসাদ।
পূজাস্থলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক মো. মহসিন মিয়া মধু। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মাধবপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক দীপন কুমার সিনহা, মাধবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা পুস্প কুমার কানু, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গঙ্গা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ করি (দাদু), সহসভাপতি পার্থ কাহার ও সাধারণ সম্পাদক রাজু করি জানান, ভগবত পুরাণের দশম স্কন্ধের দ্বাবিংশ অধ্যায়ে কাত্যায়নী ব্রতের উল্লেখ রয়েছে। কাহিনী অনুযায়ী, ব্রজের গোপীগণ কৃষ্ণকে পতিরূপে কামনা করে সমগ্র কার্তিক মাসজুড়ে এই ব্রত পালন করেছিলেন। সেই ঐতিহ্য ধরে চা বাগানের নারীরা আজও পালন করেন এই পূজা।
এক মাস ধরে তারা মশলাবিহীন খিচুড়ি ও সিদ্ধজাত খাবার খেয়ে ব্রত রক্ষা করেন। প্রতিদিন ভোরে ধলাই নদীতে স্নান শেষে নদীর তীরে মাটির তৈরি কাত্যায়নী মূর্তি গড়ে পূজা করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে। এই পূজা শেষে তারা প্রার্থনা করেন- জীবনে শান্তি, সুখ ও পরিবারের মঙ্গল কামনায়। চা শ্রমিকদের জন্য এই উৎসব শুধু ধর্মীয় আচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি তাদের ঐক্য, আনন্দ ও সাংস্কৃতিক পরিচয়েরও প্রতীক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পূজাই যেন তাদের জীবনসংগ্রামের মাঝে ভক্তি ও উৎসবের উজ্জ্বল রঙ ছড়িয়ে দেয়।
বুধবার ভোরের গঙ্গা স্নান আর পূজার্চনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চা শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী ২৫তম কাত্যায়নী পূজা। ধলাই নদীর ঢেউয়ে ভেসে গেল ভক্তদের প্রার্থনা- মা কাত্যায়নী, আমাদের জীবন হোক শান্তি ও ভক্তির আলোয় পূর্ণ।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস