
ভোটের দায়িত্ব থাকা যেকোনো ব্যক্তির অনিয়ম নজরে এলে এখন থেকে সরাসরি নির্বাচন কমিশনই (ইসি) শাস্তি দিতে পারবে। এক্ষেত্রে বরখাস্ত থেকে শুরু করে জেল-জরিমানাও হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ছাড় পাবে না।
রোববার (০৫ অক্টোবর) নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন- ১৯৯১ সংশোধন করে এমন বিধানের অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন- ১৯৯১ সংশোধনে ইসির দেওয়া ওই প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার।
নতুন আইনে ‘নির্বাচন কর্মকর্তা’ বলতে বোঝানো হয়েছে ভোট সংশ্লিষ্ট সব দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেরিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তার পাশাপাশি দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও এতে অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে এ আইনে ৫ ধারা সংশোধনের ফলে আগের অনেক বেশি ক্ষমতা পেল ইসি। যার ফলে আগে অনিয়ম প্রমাণ হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরাসরি শাস্তি না দিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে শুধু সুপারিশ পাঠাত। যার ফলে বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হতো। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় শাস্তির সুপারিশ দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।
নতুন এ আইন কার্যকরের ফলে ইসিই সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অন্য কোনো আইনের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে, ফলে অনিয়মকারীদের বাঁচার সুযোগ আর থাকবে না।
এ আইনে ধারা পাঁচের আগের চারটি উপ-ধারা সংশোধনের সঙ্গে নতুন আরও উপ-ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
উপধারা (১): কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা কমিশন, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা রিটার্নিং অফিসারের আদেশ অমান্য করলে, আইন ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করলে, অপরাধ করলে বা কর্তব্যে অবহেলা করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ধরা হবে।
উপধারা (২): উপধারা (১) অনুযায়ী অসদাচরণ করলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, অপসারণ, বাধ্যতামূলক অবসর, পদাবনতি বা সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করতে পারবে। তবে এতে অন্য কোনো আইনে নির্ধারিত দণ্ড বা আইনি কার্যধারা বাধাগ্রস্ত হবে না।
উপধারা (৩): উপধারা (১)-এর অসদাচরণ করলে কমিশন, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা রিটার্নিং অফিসার (কমিশনের সম্মতিতে) তাকে চাকরিবিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবেন। এ আদেশ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দেওয়া আদেশ হিসেবে কার্যকর হবে।
উপধারা (৪): উপধারা (১)-এর অসদাচরণের জন্য কমিশন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/রিটার্নিং অফিসার যদি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাব দেন, তা এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
উপধারা (৫): উপধারা (৪)-এর প্রস্তাব অনুযায়ী গৃহীত ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথি, চাকরিবই ও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
উপধারা (৬): এই ধারার কোনো বিধান নিয়ে সরকার ও কমিশনের মধ্যে ভিন্নমত হলে কমিশনের সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাবে।
উপধারা (৭): কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হলে যে কোনো নির্বাচনি কর্মকর্তা/কর্মচারী কর্তব্যে অবহেলা করেছেন, কমিশন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ধারা ৬ সংশোধনে জেল-জরিমানার শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে। অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কমিশনের শাস্তির প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করলে সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানার মুখোমুখি হবেন।
কোনো ব্যক্তি বৈধ কারণ ছাড়া নির্বাচনি দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালে বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে তা অপরাধ গণ্য হবে—এর শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছর জেল বা এক লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। কমিশনের নির্দেশ অমান্য করলে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা বিশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম ধরা পড়লে ইসি ৫০টি কেন্দ্র বন্ধ করে, রিটার্নিং কর্মকর্তা বন্ধ করেন আরও একটি। দুপুরের আগেই ৫১টি কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় পুরো নির্বাচন স্থগিত হয়। তদন্তে ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলে এবং ১ ডিসেম্বর ইসি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে শাস্তির সুপারিশ করে এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়।
কিন্তু চার মাসেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইসি ফের জেল-জরিমানার হুঁশিয়ারি দেয়। তবুও কোনো কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। নতুন আইন কার্যকর হলে এ সুযোগ আর থাকবে না।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস