চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা নদীর পাঁচ কিলোমিটার জায়গায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলমান ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি একসময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, মেঘনা ও ধনাগোধা নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে দুই নদীর পাড় ঘেঁষে নির্মিত বাধ ধসে পড়ছে। এতে করে মেঘনার জহিরাবাদ লঞ্চ ঘাট থেকে সোনারপাড়া-সানকিভাঙ্গা, চরমাছুয়া-জনতার বাজার এলাকা ভাঙনের মুখে পড়েছে। একইভাবে ধনাগোদা নদীর ষাটনল থেকে কালীপুর, নবীপুর-হাফানিয়া-খাগুরিয়া, ঠেটালিয়া-সিপাইকান্দি এলাকা ভাঙন দেখা যাচ্ছে।
ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদরাসা, বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা।
জানা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ সালে সেচ প্রকল্পের ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই মূল বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত দুবার এ বাঁধটি ভেঙে যায়। তখন কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয় অঞ্চলের মানুষে। পরে পুনরায় মেরামত করা হয় এ বাঁধটি।
কালিপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন জানায়, এলাকায় নদীর আচমকা ভাঙনের ফলে বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বসতী, কালিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালিপুর সপ্রাবি, কালিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফয়েহ আহম্মেদ মেমোরিয়াল হাসপাতাল এ অঞ্চলের মানুষরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সোনারপাড়া এলাকার মো. মনির হোসেন খান জানান, দীর্ঘদিন মেঘনা নদীর জহিরাবাদ লঞ্চ ঘাট থেকে উত্তরদিকে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখানে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি ইতিমধ্যে নদীগর্ভ বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনকবলিত সিপাইকান্দি এলাকার ইউপি সদস্য একেএম গোলাম নবী খোকন জানান, সিপাইকান্দি ঠেটালিয়া অঞ্চলে ধনাগোদা নদীর দেড় কিলোমিটার ভাঙন এলাকায় ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে ব্লক নির্মাণ, জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা শুরু করেছে।
ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম সরকার জানায়, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল, কালিপুরসহ কয়েকটি অঞ্চল ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধসহ পাশের এলাকায় বালি মহলের নামে ইজারা দেওয়া যা মতলবের জন্য খুবই হুমকির ও আতঙ্কের।
মেঘনা ধনাগোদা পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী শহীন জানান, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প আজ হুমকির মুখে। মেঘনা ও ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ঘেঁষা ধনাগোদা নদীর কয়েকটি অঞ্চলে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের (পাউবোর) নির্বাহী প্রকৌশলীর মো. সেলিম শাহেদ বলেন, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প বাঁধ রক্ষায় ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে আমরা সহসা লিখিত অভিযোগ জানাবো।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি। মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি কাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করছি। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও এর তীর রক্ষায় এ নদীতে অবৈধ বালি কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025