প্রায় চারশ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্য মেনে রাজ পরিবারের প্রথা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে শ্রী শ্রী কান্তজীউ যুগল বিগ্রহ নদীপথে নৌকায় কড়া প্রহরায় শুক্রবার সকালে কান্তনগর মন্দির থেকে যাত্রা করে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আরেক রূপ কান্তজীউ বিগ্রহ নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে পুনর্ভবা নদীর দুইতীরে ভক্ত-পূণ্যার্থীর ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উৎসবে পরিণত হয়। প্রায় ২৫কিলোমিটার নৌপথে ৩৭টি নদীর ঘাটে ভিড়ানো ও ভক্তদের পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ীর মন্দিরে শুক্রবার রাতে পৌঁছাবে।
শুক্রবার ভোর হতেই স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্তের হাজার হাজার ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে কান্তজীউ মন্দির প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন পুনর্ভবা নদীর ঘাট এলাকা। কড়া নিরাপত্তা ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দলও ছিলেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। পুলিশ, আনসার, র্যাব ছাড়াও সেনা সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির হতে পূজা অর্চনা শেষে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় দিনাজপুরের কাহারোলের কান্তনগরে নৌপথে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে শ্রীশ্রী কান্তজীউ যুগল বিগ্রহ’র নৌবহরকে বিদায় জানানো হয়। পরে নৌবহর নিয়ে দিনাজপুর শহরের সাধুর ঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদীপথে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মালম্বী ভক্ত দু’কূলে কান্তজীউ বিগ্রহকে দর্শনের জন্য ভিড় জমায়। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হিন্দু পূণ্যার্থীরা তাদের বাড়ির বিভিন্ন ফল, দুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী নিয়ে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহকে উৎসর্গ করতে নিয়ে আসে।
কান্তজীউ যুগল বিগ্রহ’র নৌবহরকে বিদায়ের আগে কাহারোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোকলেদা খাতুন মীম সাংবাদিকদের বলেন, কান্তজীউ যুগল বিগ্রহ’র নৌবহরকে নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ, আনসার, র্যাব ছাড়াও সেনাসদস্যরা নিরাপত্তার বলয় করে রেখেছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (কাহারোল সার্কেল) মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও আনুষ্ঠানিকতায় কান্তনগর ঘাট থেকে দিনাজপুর শহরের সাধুর ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন নদীর ঘাটে কান্তজীউ বিগ্রহ বহনকারী নৌকাগুলো ভিড়ানো হয়। একারণে বিভিন্ন ঘাটে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরে রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ বছর আগে। সেই বংশের রাজা প্রাণনাথ ১৭২২সালে দিনাজপুর শহর থেকে ২২কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার কান্তনগর এলাকায় কান্তজীউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭৫২ সালে এই মন্দিরের কাজ শেষ করেন তার পোষ্যপুত্র রামনাথ। সেই সময় থেকেই কান্তজীউ বিগ্রহ নয় মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং তিন মাস দিনাজপুর শহরের রাজবাড়িতে রাখা হয়। জন্মাষ্টমীর একদিন আগে কান্তজীউ বিগ্রহ ধর্মীয় উৎসব-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরের রাজবাড়ীতে নিয়ে আসা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025