ঢাকার ফুটপাথের পাশে ছোট্ট এক ভাতের হোটেল। কোনো চাকচিক্য নেই, নেই কাচের শোকেস বা দামি সাইনবোর্ডও। গরম ভাতে ধোঁয়া উড়েছে, তরকারি আর মাংস সাজানো বাটিতে। এই হোটেলের কোনো কর্মচারী নেই—রান্না থেকে শুরু করে সাজানো, সবই একা সামলান মিজানুর রহমান, সবার প্রিয় ‘মিজান ভাই’।
মিজানের হোটেলের নিয়ম ছিল একেবারেই অন্যরকম। গ্রাহক নিজের মতো খাবার তুলে নিতেন, আর খাওয়া শেষে একটা ছোট্ট প্লাস্টিকের কৌটায় নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা রেখে যেতেন। কারও পক্ষে বেশি দেওয়া সম্ভব হলে দিতেন, না পারলে কিছু না দিয়েও খেতে পারতেন। এভাবেই চলছিল মিজানের ‘ফুটপাতের বুফে’।
কিন্তু একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলেন মিজান। ভিডিওতে দেখা গেল হাসিমুখে অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছেন, কেউ কম দিচ্ছে তো মিজান কিছু মনে করছেন না। সেই ভিডিওর ভিউ মিলিয়ন পেরোল। মানুষের ভিড়ও বাড়ল কিন্তু তার সঙ্গে বদলে গেল সবকিছু।
প্রথমে ভিড় জমাল ইউটিউবার আর কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। খাবারের চেয়ে তাদের আগ্রহ বেশি ছিল রিভিউ, ক্যামেরায় মিজানের মুখ ধরা, ভাইরাল কনটেন্ট বানানো। মিজান বলেন, সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রান্নার সময়ই পাই না। খাবার ঠিকমতো হয় না, তাই বিক্রিও কমে গেছে।
আগে দিনে বিক্রি হতো ১২০০ টাকার বেশি, এখন ৫০০–৬০০ টাকাও ওঠে না। মিজানের কণ্ঠে তীব্র কষ্ট “মানুষ বেশি হয়ে গোশত তিন চার পিস করে নিয়ে খেয়ে যায়, আমি কিছু বলতে পারি না। ১০ কেজির কড়াই তুলি, শেষে ডিব্বায় মাত্র এক হাজার টাকা। অনেকে টাকাই দেয় না। আমার হাজিরার টাকাও থাকে না।”
এরই মধ্যে প্রশাসনের চাপ—হোটেল সরিয়ে নিতে হবে। পুলিশের কথায় আতঙ্কিত, আবার নিজের কিছু উল্টোপাল্টা মন্তব্যে অনুশোচনায় ভুগছেন তিনি। চোখ ভিজে আসে মাগরিবের আগে দোকান গুটিয়ে বাসায় ফেরার কথায়। মিজানের দাবি, এসব কাণ্ডে স্ত্রীও তার ওপর বিরক্ত। ব্যবসাও একেবারেই মন্দায়।
শেষে প্রায় মিনতির সুরে মিজান বলেন, “সবাইকে বলি, আমার ব্যবসাটা নষ্ট কইরেন না। আমি তো জানতাম না ভাইরাল হইলে এমন হয়।”
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025