২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ, গত ১১ মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে ১২ হাজার ৮২৭টি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৭৬৮টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়। এ সময়ে ৩৯৯টি মামলা ও ৩২১টি মামলার চার্জশিট দেয় দুদক।
মাস হিসাবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সর্বাধিক ৭০টি ও ৫৪টি মামলা করা হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে ৩৪৩ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী ১১৪ জন, ৯২ জন রাজনীতিবিদ। এ সময়ে দুদকের জালে ফেঁসেছেন মোট এক হাজার ২৬৪ দুর্নীতিবাজ। এ সময়ের মধ্যে ২২৩ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি। একই সময়ে ৯টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) করা হয়েছে।
দুদক থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত বছরের আট আগষ্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই মূলত দুদকের পালে হাওয়া লাগে।
নিজেদের চেয়ার রক্ষার তাগিদে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ কমিশন নড়েচড়ে বসে। তারা একের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তারপরও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। পদত্যাগ করে সরে যাওয়ার পর দায়িত্ব নেয় আবদুল মোমেন কমিশন। এ কমিশনে কাজের গতি আরও বাড়ে।
দুদক থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, গত ১১ মাসে রাঘববোয়ালসহ দুই হাজার ৭৮৮ দুর্নীতিবাজ দুদকের জালে ফেঁসেছেন। যারা সরাসরি অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিভিন্ন মামলা বা চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েছেন।
তাদের মধ্যে এক হাজার ৪৩২ জন মামলার ও এক হাজার ৩৫৬ জন চার্জশিটভুক্ত আসামি। এর মধ্যে ৩৪৩ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী ১১৪ জন, ৯২ জন রাজনীতিবিদ এবং ৭১৫ জন বেসরকারি চাকরিজীবীসহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে পাঁচ হাজার ৯২৯টি। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৫৩০টি। মামলা হয়েছে ২৫৫টি, চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ১৭৫টি। আর চার্জশিটভুক্ত আসামি ৫৩৮ জন। এ ছয় মাসে দুদকের করা মামলায় মামলার মোট আসামি ৯৮৩ জন। যার মধ্যে রাজনীতিবিদ ৬৮, সরকারি চাকরিজীবী ২১১ ও জনপ্রতিনিধি ১৪ জন।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘দুদক আইনের মধ্যে থেকে নিজস্ব গতিতেই কাজ করছে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কমিশন।
অনুসন্ধান শেষে মামলা ও চার্জশিট দেওয়ার কাজও চলছে। এক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের রাজনৈতিক কিংবা পেশাগত পরিচয় দেখা হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে চলমান অনুসন্ধান, মামলা ও চার্জশিটেও সেটা দৃশ্যমান।’
আওয়ামী সরকারের পতনের পর দুদকের কাজে গতি এসেছে স্বীকার করে মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর দুদকের কাজের গতি বেশ বেড়েছে।
তবে, সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের মতোই রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজ করছে দুদক। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে তখনকার সরকারের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক আগ্রহ দেখায়নি।
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সব নেতা পালিয়ে যাওয়ায় দুদক এখন গণহারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কোনো উপদেষ্টা ও আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠলেও তাদের ব্যাপারে নীরব দুদক।
তবে দু’জন উপদেষ্টার এপিএস ও পিওর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। উপদেষ্টাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া এপিএস-পিওরা দুর্নীতিতে জড়াতে পারে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সর্বশেষ আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সাবেক শীর্ষ আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ব্যবসায়ী, পুলিশের শীর্ষকর্তাসহ হাজারের বেশি ব্যক্তির দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছে দুদক।
অধিকাংশের বিরুদ্ধেই ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুস গ্রহণ, ব্যাংকের ঋণের অর্থ লোপাট, অর্থ পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025