একমাস যাবৎ ট্রলারে রান্না করে খাই। সাগরে নামবো নামবো করে বাড়িতেও যেতে পারি না। আবার আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সাগরেও নামতে পারি না। ২০ জন জেলে প্রতিদিন বাজার করে খাওয়া, বরফ নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে নষ্ট করে ফেলা, এভাবেই কাটছে আমাদের জীবন।
এভাবেই নিজেদের বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করলেন নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে পটুয়াখালীর মহিপুর বন্দরে আশ্রয় নেওয়া এফবি মা-বাবার দোয়া ট্রলারের মাঝি তৈয়ব মাঝি (৩৫)।
গত ১১ জুন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। এর এক সপ্তাহ পর তৈয়ব মাঝি নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে সমুদ্রে ২০ জন জেলে নিয়ে মাছ ধরতে যান। সমুদ্রে চারদিন জাল ফেলে কিছু মাছ পেলেও বৈরী আবহাওয়ায় টিকতে না পেরে কাছাকাছি বন্দর আলীপুর ঘাটে আশ্রয় নেন ট্রলারসহ।
ওই ট্রলারের জেলে ওহাব মিয়া বলেন, আমরা বাড়িতে যাই না, গেলেই মানুষ পাওনা টাকা চায়। আবার পরিবারের জন্য খরচ নিয়ে যাওয়া লাগে। কিছুই হয় না। এখানে বসে বসে খাই তার ঋণের বোঝা বৃদ্ধি করি।
ওই ট্রলারের মাঝির ভাষ্য, অবরোধের পর তারা যখন সমুদ্রে নামেন তখন সাড়ে ৭ লাখ টাকার সরঞ্জামাদি নিয়ে সাগরে নামেন। চার দিনে মাছ পান ৩ লাখ টাকার। একমাস পর ফের সাগরে নামেন ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার জাল, তেল, বরফ ও খাবার নিয়ে। কিন্তু এবার ফিরছেন মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার মাছ নিয়ে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) আলীপুর-মহিপুর ও কুয়াকাটার মাছ বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় অনেকেই ফিরছে। তবে কেউ মাছ নিয়ে, কেউ খালি হাতে। কিন্তু ইলিশের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে এখনো।
৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের মাছ মণ প্রতি ৯৮ হাজার টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের মাছ ৭৫-৭৮ হাজার টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রামের ৬৮-৭০ হাজার, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের মাছ ৫৬-৫৮ হাজার টাকা। ছোট ইলিশগুলো ৪০-৫০ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে।
আলীপুর মৎস্য বন্দরের আড়তদার কামাল হোসেন জানান, জেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকি কখন সমুদ্র থেকে ট্রলার ভরে মাছ নিয়ে আসবে। কিন্তু সারাবছর বৈরী আবহাওয়া আর নিষেধাজ্ঞায় আমাদের ব্যবসায় ধস নামিয়েছে। লাখ লাখ টাকার মালামাল দিয়ে ট্রলার সমুদ্রে পাঠাই। দুই-তিন দিনের মধ্যেই আবহাওয়ায় টিকতে না পেরে চলে আসে তীরে। এভাবে চলছে একটানা গত দেড় মাস।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজিব সরকার জানান, সমুদ্রে জেলেদের ইলিশ শিকার এবং জীবনমান বর্তমানে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের ধারাবাহিকতা পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত প্লাস্টিক পলিথিন সমুদ্রের তলদেশ ধ্বংস করছে। পাশাপাশি অবৈধ জালের ব্যবহারে ইলিশ কমেছে। আর এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব জেলেরা। সরকার অবৈধ জাল উৎপাদন বন্ধ এবং প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করি।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সরকারের দেওয়া ৫৮ দিনের অবরোধ শেষ হওয়ার পর জেলেরা মাছ পেতে শুরু করেছিল। তবে বৈরী আবহাওয়া অনেকটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আমরা আশা করি আবহাওয়ার বৈরিতা কাটিয়ে উঠলে পর্যাপ্ত মাছের দেখা মিলবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ