চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা না রাখার পরামর্শ দিয়েছিল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। একই সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা যুক্ত করার সুপারিশ করে বোর্ড। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে অবশেষে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর একাদশে ভর্তি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এ নীতিমালার একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৫৫ বছর আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ‘কোটা রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই’ বলে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে বোর্ডের খসড়ায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী, শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আগামী দুই বা তিন বছরের জন্য কোটা রাখা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষা বোর্ডের ওই খসড়া নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত ভর্তি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটাও রাখা হয়েছে। তবে উভয় কোটাতে যদি শিক্ষার্থী না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে শূন্য আসনে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রকৃতভাবেই বিবেচনার যোগ্য। তবে বাইরে নানামুখী সমালোচনা ও বিতর্ক ওঠায় এ কোটা বাদ দেওয়া হচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা এবং গণঅভ্যুত্থান কোটা- দুটিই রাখা হবে। তবে কোটায় কোনো শিক্ষার্থী না পাওয়া গেলে সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি করানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা চলতি বছর রাখা হবে। আগামী বছর থেকে এ কোটা বাতিল করা হতে পারে। তাছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তির ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়া হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
২০২৪ সালে প্রণীত সবশেষ নীতিমালা অনুযায়ী—একাদশ শ্রেণিতে বর্তমানে মেধা কোটায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হয়। অর্থাৎ, সবার জন্য ৯৩ শতাংশ আসন উন্মুক্ত। বাকি ৭ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় ভর্তি করানো হয়।
যার মধ্যে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। বাকি ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন ২৮টি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য রাখা হয়। এবারের নীতিমালায় কোটা বণ্টন নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করতে আগামী ২১ জুলাই বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সিদ্দিক জুবায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বৈঠকে অংশ নেবেন রাজধানীর ৩৫টি বড় কলেজের অধ্যক্ষরাও।
এদিকে, একাদশ শ্রেণিতে এবারও তিন ধাপে অনলাইনে ভর্তি আবেদন নেওয়া হবে। প্রথম ধাপের আবেদন শুরু হতে পারে আগামী ২৪ জুলাই, যা চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। ২১ আগস্ট রাতে এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। এ ধাপে ভর্তি সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন করতে হবে আগামী ২৫ আগস্ট রাত ৮টার মধ্যে।
দ্বিতীয় ধাপে আবেদন গ্রহণ করা হবে ২৬ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত। ফল প্রকাশ হবে ৩১ আগস্ট রাত ৮টায়। তৃতীয় ধাপে আবেদন গ্রহণ করা হবে ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। সর্বশেষ মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর।
এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে চূড়ান্ত ভর্তি, যা চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ শ্রেণিতে সারাদেশে একযোগে ক্লাস শুরু হবে।
গত ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। তবে সারাদেশে কলেজ, মাদরাসা, পলিটেকনিক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য আসন রয়েছে সাড়ে ৩৩ লাখ। সেই হিসাবে সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও আসন শূন্য থাকবে প্রায় ২০ লাখ।
বাংলা৭১নিউজ/এআরকে