চাঁদা না দেওয়ায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় শরীয়তপুরের একাধিক বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক যুবদল নেতা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শরীয়তপুর থেকে যাত্রাবাড়ীতে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
শনিবার (১২ জুন) সকাল ১০টায় শরীয়তপুরে জেলা বাস মালিক সমিতির অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন বাস মালিক-শ্রমিকরা।
বাস মালিকদের দাবি, চাঁদার ৫ কোটি টাকা না পেয়ে স্থানীয় সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার অনুসারীরা শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের একটি পরিবহনের একাধিক বাস ভাঙচুর করে ও শ্রমিকদের মারধর করে।
জানা যায়, ঘটনার পর গত ৮ জুলাই থেকে থেকে যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুটে পরিবহনটির যাত্রীসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি ভুক্তভোগী বাস মালিকদের।
জেলার বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় নিয়মিত যাত্রীপরিবহন করে আসছে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের দুই শতাধিক বাস। এ রুট ধরে প্রতিনিয়ত ঢাকা ও শরীয়তপুরে যাতায়াত করে অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী। সম্প্রতি এরুটে চলা পরিবহনগুলোর মালিকদের কাছে ৫ কোটি চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে।
এদিকে তাকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজন শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বাস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের চালক মাসুদ রানা বলেন, যাত্রাবাড়ী গেলেই বিএনপির কিছু নেতা আমাদের বাস ভেঙে ফেলে। শ্রমিকদের মারধর করে। সেই ভয়ে আজ পাঁচদিন ধরে বাস চালাতে পারছি না। আমরা বিষয়টির সমাধান চাই। আমার পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।
মারধরের শিকার হওয়া নয়ন বেপারী নামের এক বাস শ্রমিক বলেন, যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পর হঠাৎ আমাদের বাসে হামলা চালায় ফাহিমের লোকজন। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা বাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে। আমাকেও জখম করা হয়েছে। আমরা যাত্রাবাড়ী রুটে বাস চালাতে পারছি না।
এদিকে যাত্রাবাড়ী রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। সিদ্দিক নামের এক যাত্রী বলেন, আগে আমরা সরাসরি ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নামতাম। এখন শুনলাম চাঁদার টাকার জন্য সেখানে বাস না গিয়ে ধোলাইপাড় এলাকায় যাবে। আমরা খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়েছি। আমরা সমস্যার সমাধান চাই।
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌকিদার অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাবাড়ী রুটে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল, তবে সেটা সহনশীল পর্যায়ে ছিলো। সম্প্রতি এক যুবদল নেতা আমাদের মালিক সমিতির কাছ থেকে ৫ কোটি চাঁদা দাবি করেছেন। তাকে টাকা না দেওয়ায় আমাদের বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধর করা হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।
বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেন, যুবদল নেতা ফাহিম চাঁদার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রতিমাসে আমাদের গাড়ি থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। তবে তিনি আরও বড় অংকের টাকা (৫ কোটি) দাবি করছেন। আমরা তার সেই দাবী না মেনে বিএনপি হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। এরপর থেকে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বাসগুলোতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা চাঁদাবাজমুক্ত পরিবহন সেক্টর চাই।
অভিযোগের বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও আসন্ন কমিটির পদপ্রত্যাশী মুশফিকুর রহমান ফাহিম বলেন, আমাদের গাড়ির রুট পারমিট থাকার পরেও শরীয়তপুরের বাস মালিক সমিতি সেগুলোকে অন্য উপজেলায় যেতে দিচ্ছে না।
এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমি কারও কাছে ৫ কোটি টাকা দাবি করিনি। আমি চাঁদাবাজি করে থাকলে আমরা বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমি আমার অপরাধ মাথা পেতে নেবো।
শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের একটি পরিবহন যাত্রাবাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না এবং কতিপয় দুষ্কৃতকারী চাঁদা দাবি করেছে। সেই সঙ্গে বাসে ভাঙচুর করছে।
আমরা ঘটনাটি জানার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) সংশ্লিষ্ট ক্রাইম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা ডিএমপির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025