টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দরে কোটি টাকার পণ্য পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের মধ্যে রয়েছে আমদানিকৃত বিভিন্ন ধরনের কাগজ, টেক্সটাইল ডাইস, বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, বন্ডের আওতায় গার্মেন্টসের আমদানিকৃত কাপড়, সুতাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কাঁচামাল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে বন্দরের পানি যেখান দিয়ে যেতো সে পানি যাওয়ার কালভার্ট বন্ধ করার কারণে এ ঘটনা ঘটছে। বন্দরের পাশে ছোট আঁচড়ার পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট নিচে বেনাপোল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মাটি রেখে বন্ধ করে দেওয়ায় বন্দর এলাকার পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে বন্দর অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বুধবার সকালে কালভার্টের নিচে রাখা মাটি এস্কেভেটর দিয়ে সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে বন্দরের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার কারণে কাজ করতে না পেরে বুধবার সকালে বেনাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরে বেনাপোল স্থলবন্দর উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বন্দরের শ্রমিকদের শান্ত করে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসানের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে এস্কেভেটর দিয়ে সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
জানা গেছে, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে। পানি জমায় মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলে বন্দরে হাঁটু পানিতে কয়েক বছর ধরে এ দুর্ভোগ হলেও নজর নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের।
বেনাপোল বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে বন্দরে ৩৩টি শেড ও তিনটি ওপেন ইয়ার্ড ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। আকারে ছোট পণ্যগুলো রাখা হয় শেডের এবং বড় আকারের পণ্য রাখা হয় ওপেন ইয়ার্ডে। তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাশনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়ার্ডে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী বলেন, ‘ভারী বর্ষার কারণে বন্দরে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় আমাদের শ্রমিকরা কাজ করতে পারে না। প্রতিদিন পানির মধ্যদিয়ে কাজ করতে গিয়ে চুলকানি ও নানা অসুস্থতায় পড়তে হচ্ছে শ্রমিকদের।’
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী বকুল মাহবুব বলেন, ‘বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। কয়েকটি পণ্যাগারে পানি ঢুকে অনেক আমদানিকারকের লাখ লাখ টাকার মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরের ভাড়া প্রতিবছর বাড়লেও তারা বন্দরের উন্নয়নে কোন ভূমিকা নিচ্ছে না। অধিকাংশ অবকাঠামোয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হওয়ায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।’
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হলো বেনাপোল। সরকার এ বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা একাধিকবার বন্দরের কাছে অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে নানা অব্যবস্থাপনার কথা বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো কথা আমলে না নেওয়ায় প্রায় শতাধিক আমদানিকারক সব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বীমা না থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন ক্ষতিপূরণ দেন না।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সরানোর জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বন্দরের পাশে ছোট আঁচড়ার কালভার্টের নিচে রেলওয়ের বন্ধ করে রাখা মাটি এস্কেভেটর দিয়ে সরিয়ে দেন। এছাড়া কয়েকটি শেডের মধ্যে ঢুকে পড়া পানি লেবারের সহায়তায় সেচে বের করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025