বাজেটে প্রসাধনী পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব বৈধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে, বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বাড়াবে, বাজারে নকল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্য তৈরি করবে এবং ২৫ লাখের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিটিআইএ)। সংগঠনটির দাবি, এই শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে।
অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তা বাস্তবভিত্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের দাবিতে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিসিটিআইএ আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর যে ন্যূনতম শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এটি দেশের বৈধ আমদানির পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে, যা পরিণামে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বাজার ভরে যাবে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে, যা শুধু ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ফেলবে না, বরং হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীরা জীবিকা হারাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে শুল্কমূল্য বাড়ার কারণে অনেক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে এই ব্যবসা ছেড়ে বেকার জীবনযাপন করছেন। বর্তমান বাজেটের অবাস্তব শুল্কায়ন মূল্যের কারণে ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাবে। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আবারও চরম সংকটে ফেলবে, অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
জহিরুল হক বলেন, ‘এটি অত্যন্ত হাস্যকর যে, বিলাসবহুল রোলস-রয়েস গাড়ির শুল্কহার যেখানে মাত্র ৮৯.৩২ শতাংশ, সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী পণ্যের শুল্কহার ১৮৪ শতাংশ পর্যন্ত, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পুনরায় নূন্যতম শুল্কমূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে—এটা শুধু অবিচার নয়, চরম বৈষম্যের প্রতীক এবং স্বাধীন ও বৈধ ব্যবসার অন্তরায়।’
সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন নতুন ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, চলতি বাজেটে আমদানিকৃত প্রসাধনী পণ্যের ওপর ১৫০% পর্যন্ত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশ ২.০-এর লক্ষ্য এবং প্রধান উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এক্সপেলে টি ট্রি ফেসওয়াশ (২০০ মিলিলিটার) পণ্যের খুচরা মূল্য ১.২২ মার্কিন ডলার এবং পাইকারি মূল্য ০.৬১ ডলার। অর্থাৎ, প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য দাঁড়ায় ৩.০৫ ডলার মাত্র।
একইভাবে, এক্সবিসি কোকোয়া বাটার ক্রিম (৫০০ মিলিলিটার) খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১.৩৭ ডলারে, যার পাইকারি মূল্য প্রায় ০.৬৮৫ ডলার এবং প্রতি কেজির গড় পাইকারি মূল্য ১.৩৭ ডলারেরও কম। এসব তথ্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এই আন্তর্জাতিক মানের প্রসাধনী পণ্যের প্রকৃত মূল্য বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক পূর্ববর্তী বাজেটে নির্ধারিত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্যের তুলনায় অনেক কম।
‘এরপরও চলতি বাজেটে এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান ঘিরে থাকা এই খাতের ওপর এক সরাসরি আঘাত। এই বৈষম্যমূলক করনীতি কেবল বৈধ ব্যবসার পরিপন্থি নয়, বরং দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক—যারা আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।’
সহিদ হোসেন আরও বলেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। চোরাচালান, ভুল ঘোষণা ও রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। বেকারত্ব বাড়ায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।
চোরাচালান বাড়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রসাধনীসহ শুল্ক বেড়েছে এমন সাত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। যা আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রসাধনী ব্যবসায়ী, অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম
উপদেষ্টা সম্পাদক : সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, প্রধান সম্পাদকঃ তাজিন মাহমুদ, সম্পাদক: ডা: সাদিয়া হোসেন, যোগাযোগঃ ৪/এ,ইন্দিরা রোড, মাহবুব প্লাজা (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ।মোবাইল: ০১৯৭১-১৯৩৯৩৪, ০১৫৫২-৩১৮৩৩৯, ই-মেইল: [email protected]; [email protected]। ওয়েব:www.bangla71news.com
© All rights reserved © 2018-2025