মিনাক্ষী গাঙ্গুলি:এ সপ্তাহান্তে মাহফুজা আখতার কিরণকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ কিভাবে ক্রমবর্ধমান হারে কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগে যে কাউকে জেলে যেতে হতে পারে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা শাখার নেতৃত্বে রয়েছেন কিরণ। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ব ফুটবলের পরিচালনা পরিষদ ফিফার একজন কাউন্সিল সদস্যও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানহানি ঘটিয়েছেন এই অভিযোগে গত ১৬ই মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৮ই মার্চ একাত্তর টিভি একটি অডিও রেকর্র্ডিং সম্প্রচার করে।
বলা হয় তাতে কিরণ অভিযোগ করেছেন, ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটকে বেশি অগ্রাধিকার দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের চেয়ে তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থন বেশি পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
কিন্তু একজন স্পোর্টস বিষয়ক কর্মকর্তার এই বিষয়টি শিগগিরই বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর খেয়ালখুশি মতো দমনপীড়নের আরেকটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মর্যাদাহানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরেকজন স্থানীয় স্পোর্টস বিষয়ক কর্মকর্তা একটি মামলা করেন। এরপর কিরণকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। পাঠিয়ে দেয়া হয় জেলে। তিন দিন জেলে থাকার পর
১৯শে মার্চ শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন কিরণ। এখনও তিনি ফৌজদারি অপরাধের তদন্তের মুখোমুখি হতে পারেন এবং তার মন্তব্যের কারণে হয়তো অভিযুক্তও হতে পারেন।
কিরণকে গ্রেপ্তারের ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম হয়। হয়তো এটা তার দ্রুত মুক্তিকে নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো বিপুল সংখ্যক ঘটনা প্রামাণ্য আকারে উপস্থান করেছে, যেখানে বলা হয়েছে শুধু প্রমানমন্ত্রী অথবা তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট দেয়া, লাইক দেয়া বা শেয়ার করার জন্য মানুষকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস জেলে থাকতে হয়েছে। অন্যরা মানহানির ফৌজদারি আইনের অধীনে গ্রেপ্তারের সম্মুখীন।
এই গ্রেপ্তারগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এক শীতল প্রভাব রাখে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের মধ্যে। প্রসিদ্ধ মানবাধিকারকর্মী ও ফটোসাংবাদিক ড. শহিদুল আলমকে ২০১৮ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে ১০২ দিন জেলে আটকে রাখা হয়। এই আইনটি এত বেশি অপব্যবহার হয়েছে যে, সরকার পর্যন্ত এটাকে বাতিল করতে রাজি হয়।
এর পরিবর্তে ২০১৮ সালের অক্টোবরে পাস হয় নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এতে রয়েছে ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ। সাংবাদিকদের অভিযোগ, এই আইনটি কার্যকরভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বাধার সৃষ্টি করে।
তাই মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে ধরা বন্ধ করা উচিত বাংলাদেশের। এরই মধ্যে পক্ষপাতদুষ্ট উপায়ে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার অভিযোগ আছে সরকারের বিরুদ্ধে। তাই শেখ হাসিনা সরকারের উচিত এটা অনুধাবন করা যে, শহিদুল আলম থেকে মাহফুজা কিরণ- প্রতিটি পক্ষপাতদুষ্ট গ্রেপ্তার শুধুই বাংলাদেশের সুনামকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
(লেখক: হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক। তার এ লেখাটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে) সংগৃহিত: মানবজমিন