বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: #মিটু নিয়ে সাংবাদিক অঙ্গন এখন বেশ সরগরম। যাদেরকে দেবতার মত ভাবা হতো, তাদের নামে যা বেরিয়ে আসেছে, তা রীতিমত আঁতকে উঠার মত। আলফা আরজুর অভিযোগ তেমন একটি। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও করেছেন। আলফা আরজু একজন সাংবাদিক। তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন দূরদেশে থাকেন। কর্ম স্থলে সহকর্মির কাছে লাঞ্চিত হয়েছেন। এনিয়ে তিনি মুখও খুলেছেন। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন। আজ আবার তিনি তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন তার কষ্টের কথা।
তার এই লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হল:
আমি বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল #মি টু বিশ্বাস করি ও তাদের সবাইকে আমি দারুন শ্রদ্ধা করি ও একধরণের আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করি।
পেশাগত কারণে বাংলাদেশের বিশেষ দুইটা #মি টু অভিযোগ নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ
প্রথম অভিযোগ এসেছে – একজন বড় টেলিভিশন সাংবাদিক, প্রণব সাহার বিরুদ্ধে।
যিনি শিশু নির্যাতন করেছেন – আমি শক্তভাবেই বিশ্বাস করি এই অভিযোগ শতভাগ সত্য।
আমার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলার দরকার পড়ে না- যে আমি সাংবাদিক প্রণব সাহা’কে যৌন নির্যাতক মনে করি ও এই ধরণের সকল নিপীড়ককে ঘৃণা করি।
আমি প্রণব সাহাকে ঘৃণা করি – যৌন নির্যাতক হিসেবে।
অন্য ঘটনাটি ঘটেছে আমার সাথে – তা একজন প্রভাবশালী কূটনৈতিক প্রতিবেদক (রেজাউল করিম লোটাস) করেছেন। যেহেতু ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে – তাই আমি এই sexual abuser’কে sexual abuser বলে সমাজে পরিচয় করিয়ে দিতে ভয় পাইনি। আমাকে থামানোর অথবা ফেবু পোস্ট সরিয়ে নেওয়ার নানা তৎপরতা’কেও আমি ভয় পাইনি। কারণ, একজন খুনীও নিজের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করে নানা ভাবে, টাকা দিয়ে, প্রভাব দিয়ে, রাজনীতি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে।
আমার নির্যাতকও করছেন।
আমি #মি টু ফেবু পোস্টের পর পরই আমার সেই সাবেক পত্রিকা কতৃপক্ষ- একটি তদন্ত কমিটি করে পাবলিকলি নোটিশ দেয় ও আমাকে ইমেইল করে জানিয়েছেন – তারা এই বিষয়টাকে খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন এবং “sexual misconduct/harrasment” এর ব্যাপারে “জিরো টলারেন্স” পদক্ষেপ নিবেন।
আমি আমার সাবেক সম্পাদক, পাঁচ সদস্য দ্বারা গঠিত তদন্ত কমিটি ও সর্বোপরি পত্রিকার কতৃপক্ষকে বিশ্বাস করি এবং জানি তারা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।
আমার পোস্ট করা #মি টু এর পর জীবনই পাল্টে গেছে…।
এক দিকে, আমাকে থামানোর জন্য নিপীড়কের বিভিন্ন প্রচেষ্টা (যেহেতু, আমার ও নিপীড়কের পেশাগত কারণে পরিচিত গন্ডি অনেকটাই কমন। তাই, নিপীড়কের পক্ষে কথা বলার সময় – অনেকেই বিব্রত হয়েছেন, অনেকেই খুব গুছিয়ে বুঝিয়েছেন, কেও নিপীড়কের পরিবার, স্ত্রী, সন্তানের কথা বলে আমাকে – emotionally বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন। আমি কারোর কোথাও কোন দোষ দেখি না। এটা আসলেই কঠিন ব্যাপার।
কেও পাবলিকলি নিপীড়কের পক্ষ নিতে পারছেন না, আবার আমার পক্ষও না।
তাতে আমি কোন দোষ দেখি না, কারোর কাছে আমার কোন অভিযোগ নেই। পরিবারের মানুষগুলা – সমাজের কাছে “মান গেলো, মান গেলো” করে – বিমর্ষ হয়েছেন। আমার ও সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে আছেন।
আমি কোথাও কারোর কোন দোষ দেখি না।
কারণ, আমি জানি – বাংলাদেশের মত ভীষণ রকমের গোড়া ও রক্ষণশীল “সামাজিক ও ধর্মীয়” পরিবেশের বাইরে এসে – এইসব নিয়ে পাবলিকলি যেই কথা বলছে বা বলবে তাকেই অনেক তীর্যক কথা শুনতে হবে, দূরের ও কাছের মানুষগুলো “তুই খারাপ, তুই খারাপ” বলে মুখ ফিরিয়ে নিবে। কেও কেও কৌশলে – নির্যাতনের কথা বলা উচিত মনে করবেন, কেও বলবেন “এইসব মেনে নিয়েই সামনে চলতে হয়।” আরো যার যা মনে হয় বলবেন, এবং যিনিই কথা বলবেন – অনেক অনেক কিছু শোনার জন্য “কান ও চোখ” প্রস্তুত রাখুন।
কেও কেও বলবেন – আমি #মি টু’র পক্ষে। কিন্তু, যখন তার পরিচিত কোনো পীর-হুজুরের বিরুদ্ধে হবে – তখন বলবেন “এইটা আমি বিশ্বাস করি না, বাকিদেরটা করি” (হেঁহেঁহেঁহেঁ)
আমি কারোর কোনো দোষ দেখি না। কেও আবার বলবেন – আমি নারীর উন্নয়ন চাই, নিরাপদ কর্মস্থল চাই, স্কুল কলেজ চাই – কিন্তু #মি টু নিয়ে আমি কিছু বলবো না, আমার কোন পাবলিক স্ট্যান্ড নেই।
আমি তাদেরও কোনো দোষ দেখি না।
পাদটীকাঃ একটা সত্য #মি টু ও আমার পাল্টে যাওয়া জীবন নিয়ে কিছু কথা বলবো – তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও তার প্রেক্ষাপটে গৃহীত সিদ্ধান্তের পর। “আহারে জীবন” অর্থ “Life is Beautiful” (hummmm)।
বাংলা৭১নিউজ/এসএ