বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ জোরালোভাবে চলছে ‘মি-টু’ আন্দোলন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে বিভিন্ন অঙ্গনের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ রীতিমতো ঝড় তুলেছে ।
বহু নারী ‘#মি-টু’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা লিখে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করছেন।
এসব অভিযোগকে কেন্দ্র করে মামলা, পদত্যাগ, চাকুরীচ্যুতি এমন বহু ঘটনা ঘটে গেছে নানা দেশে। কিন্তু বাংলাদেশে এমনকি নারীবাদী বা নারী অধিকার কর্মীরাও কি বিষয়টি খানিকটা এড়িয়ে যাচ্ছেন? বাংলাদেশে নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোকেও ‘মি টু’ আন্দোলনের বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে না।
‘মি–টু’ গুরুত্ব পাচ্ছেনা নারী অধিকার কর্মীদের কাছেও?
তরুণ নারীবাদী লেখক ও সাংবাদিক শারমিন সামস বলছেন, “আমার কাছে মনে হয় এটা তাদের নীরবতা এবং এটা তাদের ভাঙা উচিৎ। কেন তারা সাইলেন্ট সেটা আমার জানা নেই। হতে পারে যে এটা একটা নতুন ইস্যু। তারা হয়ত একটু বুঝতে সময় নিচ্ছেন। তারা যদি সাইলেন্সটা দীর্ঘদিন ধরে রাখেন এটা আসলে ক্ষতিকর।”
তার মতে, “তারা যদি মনে করেন যে অমুক ব্যক্তিটি ক্ষমতাধর, বা অমুক ব্যক্তিটির একটি সামাজিক সুনাম আছে যা ক্ষুণ্ণ হবে, এই যায়গাটা তাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে। একটা রেপ হলে তারা যেমন একটা মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ান একটা মেয়ে নির্যাতিত হলে তাকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসেন এগুলো অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ঠিক একইরকম ভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে যে মেয়েগুলোকেও সমানভাবে সামাজিক ও মানসিক সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়।”
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি মেয়ে শুচিস্মিতা সীমন্তি কিশোরী বয়সের অভিজ্ঞতা ফেসবুকে প্রকাশ করে বেসরকারি ডিবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রণব সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত একজন বাংলাদেশী-বংশোদ্ভূত মডেল, অভিনেত্রী ও পাইলট মাকসুদা আখতার প্রিয়তি অভিযোগ তোলেন রঙধনু শিল্প গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এরপর বাংলাদেশে বসবাসরত কয়েকজন নারীও জোরালোভাবে এধরণের কয়েকটি অভিযোগ এনেছেন।
‘মি-টু’ অভিযোগ ওঠার পর নানা ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার কর্মীরা যেভাবে তাতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে তাদের মধ্যে এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠিত নারী অধিকার কর্মীদেরও এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত তো দুরে থাকে এমনকি মন্তব্য করতেও দেখা যায়নি। তারা কি বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন?
নারী প্রগত সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলছেন, “এড়িয়ে যাচ্ছেন বলা ঠিক না। হয়ত প্রায়োরিটি ওরকম দিচ্ছেন না। একটা বিষয় হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনটা একটা বড় বিষয়।”
তিনি আরও বলছেন, “সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের সংজ্ঞা নিয়ে কিন্তু মানুষের মধ্যে কনফিউশন আছে। এমনকি আমাদের যারা এনজিও সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের মধ্যেও একটু কনফিউশন আছে। ধর্ষণ পর্যায় পর্যন্ত না গেলে এটাকে খুব বড় অফেন্স হিসেবে দেখেন না অনেকে। যদিও হাইকোর্টের একটা গাইডলাইন আছে।”
‘মি টু’ অভিযোগগুলো মূলত উঠছে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতনকে কেন্দ্র করে।
২০০৬ সালে মার্কিন একজন অ্যাক্টিভিস্ট প্রথম ধারনাটি ব্যাবহার করলেও এটি গত বছর বেশি প্রচার পায় হলিউডে বেশ বড় সংখ্যায় অভিনেত্রীরা সেখানকার শীর্ষ একজন প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাদের নীরবতা ভাঙার পর। বিচারের মুখোমুখি রয়েছেন হার্ভি ওয়াইনস্টিন।
বাংলাদেশেও একটি বাদে যে কটি অভিযোগ উঠেছে তার সবগুলোই কর্মক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলছেন, “আমার মনে হয় আমাদের এইটা নিয়ে অনেক ভাবতে হবে। আমরা চিন্তা করছি, আমরা আলাপও করছি যে কিভাবে আমরা তাদের আরও ভালো করে সহায়তা দিতে পারি।” সূত্র:বিবিসি বাংলা
বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা/এসএস