শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দুর্যোগ মোকাবিলায় ১ কোটি স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলার পরিকল্পনা ওয়ারীতে বাথরুমে বালতির পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু নরসিংদীতে বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ ৪ জনের মৃত্যু ঢাকায় আসছেন কানাডার ইন্দো-প্যাসি‌ফিক বা‌ণিজ্য প্রতি‌নি‌ধি পার্লামেন্টের নারী স্পিকারদের সামিট এক অনবদ্য প্ল্যাটফর্ম টেক্সাসে ভারী বৃষ্টি-ঝড়, নিহত ৭ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবে, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের দুই ম্যাচ আগেই কিংসকে ‘উপহার’ বাফুফের বৃষ্টিতে ফরিদপুরের পাটচাষিদের ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হামলা আরও জোরালো করতে পারে রাশিয়া, আশঙ্কা জেলেনস্কির ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে মেয়র তাপসের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ খোকন সকালের বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি রাজধানীবাসীর কানে ঐশ্বরিয়ার লুক নিয়ে নেটপাড়ায় হাসির রোল টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে প্রাণ গেলো ২ ভাইয়ের ভারতে চলন্ত বাসে আগুন, ৮ জনের প্রাণহানি বাংলাদেশের তরুণীকে ভারতে নিয়ে পতিতাবৃত্তি, আজ আদালতের রায় ইভিএম ব্যবহারে ব্যাপক প্রচারের নির্দেশ ইসির ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত, আহত ১০

বাংলাদেশের জন্য কেন বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার?

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮
  • ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
কুয়ালালামপুরে অভিবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা (ফাইল ছবি)।

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারগুলির একটি, মালয়েশিয়ার দরজা আর পাঁচদিনের মধ্যেই আপাতত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’জিটুজি-প্লাস’ নামে যে এসপিপিএ সিস্টেমের আওতায় মালয়েশিয়া তাদের দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়োগ করত, সেই পদ্ধতি আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকেই স্থগিত হয়ে যাবে বলে সে দেশের সরকার বাংলাদেশকে ইতিমধ্যে জানিয়েও দিয়েছে। খবর বিবিসির।

কুয়ালালামপুরের সাংবাদিক শেখ কবীর আহমেদ জানিয়েছেন, বর্তমান পদ্ধতিতে যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মারফত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা হত তা বাতিল ঘোষণা করা হলেও মালয়েশিয়ার সরকার নতুন কী পদ্ধতি চালু করতে চাইছে তা আদৌ স্পষ্ট নয়।

“মাহাথির মোহাম্মদের নতুন সরকার হয়তো নতুন কোনও পদ্ধতি চালু করবেন। কিন্তু তাতে যে বেশ সময় লাগবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই, আর ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এদেশে শ্রমিক আসা বন্ধ থাকবে ধরেই নেওয়া যায়,” বলছেন মি. আহমেদ।

বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সমিতি বায়রা জানিয়েছে, গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১,৯০,০০০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে পাড়ি দিয়েছেন।

এই সংখ্যা সৌদি আরবে যাওয়া বাংলাদেশী শ্রমিকের সমান – কাজেই বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিতে মালয়েশিয়ার গুরুত্ব কতটা, তা বোঝা কঠিন নয়।

মালয়েশিয়ার বহু অবকাঠোমো প্রকল্পেই কাজ করেছেন লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীমালয়েশিয়ার বহু অবকাঠোমো প্রকল্পেই কাজ করেছেন লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী।

বায়রা-র সচিবালয়ে উপদেষ্টা মো. দলিলউদ্দিন মন্ডল অবশ্য বলছেন, “হ্যাঁ, সাময়িকভাবে হয়তো বিরূপ প্রভাব কিছুটা পড়বে। তবে মালয়েশিয়া এর আগেও বহুবার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করেছে ও আবার চালু করেছে – আর সেই গত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে এ জিনিস চলছে। কাজেই আমরা অতটা ভয় পাচ্ছি না, আশা করছি আবার নতুন কোনও সিস্টেম চালু হবে।”

তবে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ এম. এম. আকাশ মনে করছেন, মালয়েশিয়ার এই সিদ্ধান্তে রেমিট্যান্স প্রবাহে যেমন বড় ভাটা পড়ার আশঙ্কা আছে সেটা একটা দিক – কিন্তু তার চেয়েও বড় বিপদ হল বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তির সঙ্কট’।

অধ্যাপক আকাশের কথায়, “যে কারণেই মালয়েশিয়া এটা বন্ধ করুক, আমাদের যে কিছুটা বদনাম হয়ে গেল তা তো অস্বীকার করতে পারি না। আমি যেটুকু সমস্যাটা বুঝতে পারছি, আমাদের দিক থেকেও যে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত ছিল না – সেটা তো পরিষ্কার। বাংলাদেশকে এখন তারই মাশুল গুনতে হবে।”

কিন্তু মালয়েশিয়া কেন ১লা সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করছে, তার কি কোনও নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়েছে?

অবৈধ শ্রমিক-বিরোধী অভিযানে রাস্তার পাশে বসিয়ে রাখা হয়েছে আটককৃতদের। কৃয়ালালামপুর, জুলাই ২০১৮অবৈধ শ্রমিক-বিরোধী অভিযানে রাস্তার পাশে বসিয়ে রাখা হয়েছে আটককৃতদের। কৃয়ালালামপুর, জুলাই ২০১৮

মালয়েশিয়ার সাংবাদিক শেখ কবীর আহমেদ জানাচ্ছেন, “গত ২১ অগাস্ট এ দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি, জেনারেল দাতো ইন্দেরা খাইরুল দাজমি বিন দাউদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জানানো হয়েছে যে সে দেশের বিগত সরকার বাংলাদেশের যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মারফত শ্রমিক নিত, তাদের এসপিএ সিস্টেম সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকেই বাতিল হয়ে যাবে।

“এখন যদিও ওই চিঠিতে নির্দিষ্ট কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারছি ওই ১০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নিয়োগ পেতে একজন শ্রমিকের যেখানে মাত্র ৪০,০০০ টাকা লাগার কথা, সেই জায়গায় এই এজেন্সিগুলো চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত চার্জ করত বলে জানা যাচ্ছে”, বলছিলেন মি আহমেদ।

এই দুর্নীতির সঙ্গে মালয়েশিয়ার পূর্বতন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন মালয়েশিয়ার নাগরিকও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এই কথিত দুর্নীতির ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বায়রা কর্তৃপক্ষ।

তবে সংস্থার উপদেষ্টা দলিলউদ্দিন মন্ডল জানাচ্ছেন, তারা চেয়েছিলেন এই রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতি সব সংস্থার জন্যই উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।

তার কথায়, “এর আগে ২০১৬তে দুই দেশের সরকার যখন আলোচনায় বসেছিল, তখন বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯০০ এজেন্সির নাম জমা দেওয়া হয়েছিল – কিন্তু মালয়েশিয়া মাত্র ১০টি এজেন্সিকে বেছে নেয় এবং বলে যে সংখ্যাটা পারে বাড়ানো হবে। আমরা অনেকবার লিখেছি যে প্রসেসটা ওপেন করে দেওয়া হোক, কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত আর হয়নি।”

মালয়েশিয়ার প্রধান ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা
মালয়েশিয়ার প্রধান ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা।

“এখন মালয়েশিয়াতে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার হয়তো আগের পদ্ধতিটা পছন্দ করছে না, এই জিনিস তো প্রায়ই হয়। ঠিক বলতে পারব না কী হয়েছে, তবে আমাদের বিশ্বাস মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রপ্তানি পাকাপাকিভাবে কিছুতেই বন্ধ হবে না।”

“তাহলে তো দুপক্ষেরই ক্ষতি, তাই না? ওরা যদি সা-রে-গা-মা সুর ধরে থাকে, তাহলে আমাদের শ্রমিকরা গিয়েই তো পা-ধা-নি গেয়ে সপ্তসুর শেষ করছে – এটা তো বুঝতে হবে। দুজনেরই আসলে পরস্পরকে দরকার”, বলছিলেন মি. মন্ডল।

মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেই আপাতত বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করা হচ্ছে, বায়রা এমন একটা ইঙ্গিত করতে চাইলেও সেই যুক্তি মানতে নারাজ অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ।

তিনি বলছিলেন, “যদি ধরেওনি মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পুরনো জমানার মন্ত্রী-নেতাদের দুর্নীতি খুঁড়ে বের করার চেষ্টা হচ্ছে, বাংলাদেশকে তো তার বলির পাঁঠা বানানোর কোনও কারণ নেই। এখানে আমাদেরও কিছু গাফিলতি ছিল, সেটা স্বীকার করে নেওয়াই ভাল।”

বাংলাদেশী শ্রমিকরা ফিরে আসছেন মালয়েশিয়া থেকে (ফাইল ছবি)বাংলাদেশী শ্রমিকরা ফিরে আসছেন মালয়েশিয়া থেকে (ফাইল ছবি)।

জনশক্তি রপ্তানির পুরো পদ্ধতিটা যতক্ষণ না পুরোপরি ‘ডিজিটাল’ করা হচ্ছে, ততদিন এই জাতীয় সমস্যা থেকেই যাবে বলে ধারণা অধ্যাপক আকাশের।

“সরকারের একটা ওয়েবসাইট থাকবে – যেখানে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা নিজেদের যোগ্যতা, তথ্য-পরিচয় উত্যাদি আপলোড করবেন। সেখান থেকে বেছে নিয়ে বিদেশে চাহিদা অনুযায়ী ম্যাচ করে তাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হবে, এটা করলেই তো সমস্যা মিটে যায়!”

“তার বদলে এখন যে ‘মিডলম্যান’ বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের ‘স্বার্থাণ্বেষী চক্র’ কাজ করছে সরকার তাদের কাছে বারবার নতি স্বীকার করার ফলেই গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমবাজারগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে”, বলছিলেন অধ্যাপক আকাশ।সূত্র: বিবিসি বাংলা।

বাংলা৭১নিউজ/বিআর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com