বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার দুই বছর পর গতকাল আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, হামলার সাথে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কোন চক্রের সম্পর্ক নেই।
বরং সরকারকে বিপদে ফেলতে স্থানীয় জঙ্গিরা ঐ হামলা চালিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।পুলিশের এই বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এ বিষয়ে সুইডেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামি সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক গবেষক এবং লেখক তাসনিম খলিলের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল বিবিসি বাংলা।
তিনি জানান, “হলি আর্টিজানে হামলার সাথে প্রথম থেকেই আইএস এর সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে আসছে। তারা হলি আর্টিজানের ভেতর থেকে মৃতদেহের ছবি পোস্ট করেছে তারপর সিরিয়ার রাকা থেকে ভিডিও প্রকাশ করেছে।”
আইএস এর যেসব প্রোপাগান্ডা অর্গান এবং মিডিয়া আছে সেখান থেকে সেই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয় বলে জানান তিনি।
এছাড়া যে পাঁচজন হামলাকারী ছিল, তাদের ছবিও আইএস এর বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে প্রকাশ পায়।
মি: খলিল আরো বলেন, “অভিযোগপত্রে তামিম আহমেদ চৌধুরী নামে একজনের পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে, দাবি করা হচ্ছে যে তিনিও হামলায় জড়িত ছিলেন।”
অভিযুক্ত তামিম আহমেদ বাংলাদেশে আইএস সংশ্লিষ্ট সংগঠন দাইলাতুল ইসলাম বেঙ্গলের মিলিটারি অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন; যেটি আইএস তাদের রুমিয়া ম্যাগাজিনের আর্টিকেলে প্রকাশ পায়। তামিম আহমেদ নিজেই সেই আর্টিকেল প্রকাশ করেন বলে জানান মি: খলিল।
তিনি বলেন, “এখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে হলি আর্টিজানের হামলাটি আইএস এর করা ছিল।”
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতার হুমকি মুখে আছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে মি: খলিল বলেন, “জিহাদি হামলা এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে একেবারেই নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জনগণের সঠিক সত্যটি জানার অধিকার আছে। যেন সামনে এ ধরণের হামলার আশঙ্কা থাকলে সেগুলো সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা যায়। নাগরিক, নিরাপত্তা সংস্থা, গবেষক সবাই মিলে যেন এ থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে পারে।”
তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী যদি এ ধরণের লুকোচুরি করতে থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে এটার ফলাফল খুব একটা সুবিধার হবেনা বলে জানান মি: খলিল।
সম্প্রতি জামাতুল মুজাহিদিন বা জেএমবি তাদের নতুন ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের লেখক এবং প্রকাশক শাজাহান বাচ্চুর হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি হলে এ ধরণের হামলা আরো হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে ওই ভিডিও বার্তায়।
জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ ধরণের ভিডিও প্রকাশ আসলেই কি বার্তা দিচ্ছে জানতে চাইলে মি: খলিল বলেন, “জিহাদি সংগঠনগুলো সব সময়ই নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের অভিযান চালিয়ে থাকে। সম্প্রতি তারা আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছে। এখন পাকিস্তানের নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। কারণ জঙ্গি সংগঠনদের মতবাদ অনুযায়ী, গণতন্ত্র বা নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ইসলাম বিরোধী। এজন্য তারা গণতন্ত্রের এই প্রতীকগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।”
জঙ্গিরা যে হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা সংস্থা যৌথভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মি: খলিল।সূত্র: বিবিসি বাংলা।
বাংলা৭১নিউজ/এসকে