বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটকে পাঁচ বছরে বিনিয়োগ করা হয়েছে ২ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে লোকসানের পরিমাণও নেহাত কম নয়, ৩৭৭ কোটি টাকা। লোকসানের আবর্তে ঘুরপাক খেলেও এর বিনিয়োগ উদ্যোগ থেমে নেই। গ্রামে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিদেশী ঋণ নেয়ার উদ্যোগ রয়েছে। সেসঙ্গে চলছে অংশীদার হিসেবে বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির জন্য গত পাঁচ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছর বিনিয়োগ হয় ১৪৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। পরের অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকায়। ২০১২-১৩ অর্থবছর বিনিয়োগ হয় ৫৪৯ কোটি ৬৫ লাখ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছর ৪৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর বিনিয়োগ করা হয় আরো ২৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
এ বিনিয়োগের বিপরীতে গত পাঁচ অর্থবছরে টেলিটকের রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। এ আয়ের বিপরীতে সংস্থাটির মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির গত পাঁচ অর্থবছরে নিট লোকসান ৩৭৬ কোটি টাকা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ প্রসঙ্গে বলেন, টেলিটকে বিদেশী বিনিয়োগ আনতে আলোচনা চলছে। বড় ধরনের বিনিয়োগ পেলে প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক ও সেবার মান আরো উন্নত হবে। ফলে খাতটিতে অন্যরাও প্রতিযোগিতামূলকভাবে মানসম্পন্ন সেবা দিতে এগিয়ে আসবে। বিদেশী বিনিয়োগকারী আকর্ষণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এগুলো কার্যকর হলে টেলিটক একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাজার দখল নিতে পারবে। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি লোকসান থেকেও বেরিয়ে আসতে সমর্থ হবে।
পাঁচ অর্থবছরে টেলিটকের রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক অর্থবছরই শুধু লাভের মুখ দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১০-১১ অর্থবছর রাজস্ব আয় হয় ২৯৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় হয় ৩১৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছর রাজস্ব আয় ৩৫৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ও ব্যয় হয় ৩১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করে ৪৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
তবে পরের অর্থবছরই বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২-১৩ অর্থবছর ৬৭৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয় ৮৫৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এতে লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ১৮১ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছর ৯৬৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয় ৯৮৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লোকসান হয় ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৮৩৪ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে লোকসান হয় ২০২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, টেলিটকের গ্রামপর্যায়ে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
এ অর্থের মাধ্যমে তিনটি প্রকল্প সম্পন্ন করা হবে। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে টেলিটকের নিজস্ব অর্থায়নে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কোর নেটওয়ার্কসহ ৩ হাজার ৫০০টি বিটিএসের মধ্যে দুই হাজার টুজি ও দেড় হাজার থ্রিজি নোড বির মাধ্যমে ৮০ শতাংশ টাওয়ার শেয়ারিং ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সমগ্র উপজেলা ও গ্রোথ স্টোরগুলোকে থ্রিজি স্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৭০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়েছে।
একই সঙ্গে থ্রিজি প্রযুক্তি চালুকরণ ও ২.৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ফেজ-২) শীর্ষক একটি প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় কোর নেটওয়ার্কসহ ৩ হাজার ৫০০ বিটিএসের মধ্যে দুই হাজার টুজি ও দেড় হাজার থ্রিজি বিটিএস সাইট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একনেকের অনুমোদনসাপেক্ষে এর বাস্তবায়নকাজ চলতি বছরের জুলাইয়ে শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে আরেকটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর আওতায় দুই হাজার বিটিএস পরিবর্তন এবং দুই হাজার বিটিএস সাইট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/বণিক বার্তার সৌজন্যে