বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: নতুন আঙ্গিকে যাত্রা করছে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আগামী ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দশতলা এই ভবনটির উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আগের কার্যালয়ের স্থানেই নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক এই ভবন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নতুন অফিস হবে দলের নেতা-কর্মীদের প্রেরণার বাতিঘর।
ভবনটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই অফিসটার কন্ডিশনটা খুব খারাপ ছিল। আমাদের কর্মীরা এখানে উঠতে পারত না, বসতে পারত না। এত বড় একটা দলের এই রকম অফিস তো থাকতে পারে না। ইনশাল্লাহ আগামী ২৩ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করবেন। এইটা খুবই মজবুত বিল্ডিং।’
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, সারা ঢাকা শহরে যদি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যদি বিল্ডিং করা হয় তবে এটা একটা।’
এক বছর আগে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভিত্তিফলক স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের আগের কার্যালয়ের সাত কাঠা জায়গায় এই ভবনের নির্মাণ কাজ চলে টানা এক বছর।
ভবনটিতে যা থাকছে
আওয়ামী লীগের নবনির্মিত এই প্রধান কার্যালয়ে রয়েছে গাড়ি পার্কিং, অভ্যর্থনা কেন্দ্র এবং দুটি হল রুম। আর চতুর্থ তলা থেকে প্রতি ফ্লোরে আছে দুটি করে ভিআইপি রুম এবং একটি করে সভাকক্ষ। ভূমিকম্প সহনীয় অত্যাধুনিক ভবনটিতে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সুবিধার পাশাপাশি থাকবে ডিজিটাল লাইব্রেরিও।
দলীয় সভাপতির কার্যালয় থাকছে ভবনের অষ্টম তলায়। সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের কার্যালয় থাকছে সপ্তম তলায়। নয় তলায় থাকছে গবেষণা কেন্দ্র ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের বসার জায়গা। এছাড়াও বিশাল এই ভবনের ছাদে থাকবে হেলিপ্যাড।
প্রতিটা খরচ ট্রান্সপারেন্ট
আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিরাট দল। সবাই তো টাকা-পয়সা দেয়। আমাদের অনেক সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে, তারা অনেক অর্থায়ন, সাহায্য সহযোগিতা করে। প্রতিটা খরচ কিন্তু ট্রান্সপারেন্ট।’
আশিকুর রহমান বলেন, ‘এটা প্রাণকেন্দ্র হবে আওয়ামী লীগের। ইতিহাস যেমন কথা বলে, বিল্ডিংটাও কথা বলবে। শুধু বিল্ডিং না এটা আমাদের একটা প্রতীক; প্রেরণার উৎস। সেই হিসেবেই এটাকে করা হয়েছে।’
দশতলা ভবনটির প্রতি ফ্লোরের আয়তন চার হাজার বর্গফুট, যার প্রতি বর্গফুট নির্মাণে খরচ পড়েছে চার হাজার টাকার কম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দলীয় তহবিল এবং সদস্যদের চাঁদার টাকায় তৈরি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের এই স্থায়ী কার্যালয়।
দেশের বৃহত্তম পার্টি অফিস হবে
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি দেশের বৃহত্তম পার্টি অফিস হবে। পুরনো ভবন ভাঙার প্রায় দুই বছর পর নতুন ভবনে উঠতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নবনির্মিত ১০ তলা ভবনের ৬-৭ তলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় থাকবে। থাকবে কনফারেন্স হল, সেমিনার রুম, ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, ক্যান্টিন, সাংবাদিক লাউঞ্জ ও ডরমিটরি।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের জন্য বড় পরিসরে আলাদা কক্ষ থাকছে। পুরো কার্যালয়টিতে ওয়াইফাই জোন হবে।
আওয়ামী লীগ অফিসের ইতিহাস
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে আট থেকে নয় বার। পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর পালাক্রমে নেতৃস্থানীয় নেতাদের বাসায় বসে দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হত, কোনো অফিস ছিল না। ১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হত। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডে দলের অফিস স্থাপন করা হয়।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন। এর কিছু দিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছু দিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। ১৯৮১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঠিকানা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ জুলাই এই কার্যালয়টি ভাঙা হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে অফিস ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/বিকে