বাংলা৭১নিউজ, মোঃ মনজুর-ই-মওলা সাব্বির, নাটোর প্রতিনিধি: জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি জীবদ্দশায় তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাবার আদর্শকে বুকে লালন করেছেন। তিনি বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ছেন।
তেমনি আমিও শেখ হাসিনার মত আমার বাবার স্বপ্নকে বুকে লালন করছি। বাবার প্রত্যাশা পূরণ করতে দিন-রাত নিরলস পরীশ্রম করছি। বাবার স্বপ্ন ছিল আমাকে এমবিবিএস ডাক্তার বানাবেন। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। আর এজন্য সরকার এবং দেশবাসীর সহযোগীতা চাই’
এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন শেষে কাঁদতে কাঁদতে এমনি কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের বাবা-হারা মেয়ে তাছনিম আক্তার মাওয়া। তার কান্না দেখে পাশেই আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদছিলেন মা হোসনে আরা। সোমবার দুপুরে প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে এমনই জবাব দেন মাওয়া।
তাছনিম আক্তার মাওয়া নাটোর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। তিনি সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া-বৈকন্ঠপুর এলাকার গ্রাম্য ডাক্তার মৃত কলিম উদ্দিনের মেয়ে। তার ছোট ভাই মাহমুদুল হাসান ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মাওয়া তার প্রাণপ্রিয় বাবাকে হাড়িয়ে ফেলেন।
ওই সময়ে ভাই মাহমুদুল হাসান মা’র গর্ভে ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর নানা-নানীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মা’র একান্ত সহযোগীতায় বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে ভাল ফলাফলের আশায় দিনরাত কঠোর পরীশ্রম করে পড়া চালিয়ে যায় মাওয়া। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পরিবারের সকলের চোখে-মুখে আনন্দ দেখা দিলেও আনন্দে কেঁদে ফেলেন মাওয়া। হোসনে আরা জানান, মাওয়ার বাবা কলিম উদ্দিন একজন গ্রাম্য ডাক্তার হলেও মানবসেবায় তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
তিনি গরীব-দুখিদের নামমাত্র টাকা নিয়ে চিকিৎসা দিতেন। কেউ যদি টাকা নিয়ে না আসতেন তবে তিনি তাকেও ঔষধ দিতেন। বলতেন, হাতে টাকা হলে দিয়ে যেও। ২০০৯ সালে হঠাৎ করেই কলিম উদ্দিন মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর মাওয়া আর গর্ভের সন্তানকে নিয়ে দিঘাপতিয়া বৈকন্ঠপুর এলাকায় একাকি বসবাসের সাহস হয়নি তার। বাধ্য হয়ে বাড়ি-ঘর ফেলে বাবার বাড়ি শহরের চকআমহাটী গ্রামে(মাওয়ার নানা-নানীর বাড়ি) আশ্রয় নেন তিনি। বর্তমানে ওই গর্ভের সন্তান মাহমুদুল হাসান ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে।
চোখ মুছতে মুছতে হোসনে আরা আরো জানান,কলিমের খুব ইচ্ছে ছিল মাওয়াকে এমবিবিএস ডাক্তার বানাবেন। যাতে ডাক্তার হয়ে তার মত মানবসেবা করতে পারে কেননা মানবসেবাকেই আল্লাহর সেবা বলে জানতেন কলিম। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েকে শত কষ্টের মাঝেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন তিনি।
জ্ঞান-বুদ্ধি পাকাপোক্ত হওয়ার পর মেয়েকে বাবার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। মেয়ে বলেছিল, এমবিবিএস ডাক্তার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে সে। এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করার মধ্যদিয়ে মাওয়া সেই পথে আরো একধাপ এগুলো বলে দাবী করেন হোসনে আরা। তবে এমবিবিএস পড়ানোর সামর্থ তার নেই উল্লেখ করে তিনি এব্যাপারে সরকার আর দেশের মানুষের সার্বিক সহযোগীতা আর সহায়তা কামনা করেছেন।
জিপিএ-৫ অর্জনকারী মাওয়া দাবী করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিবা বাবার আদর্শকে বুকে লালন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে নিরলস পরীশ্রম করছেন। দেশের দুখি মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার মত তিনিও বাবার মানবসেবার আদর্শকে বুকে লালন করছেন। বাবার স্বপ্নের এমবিবিএস ডাক্তার হয়ে শেখ হাসিনার মত দেশ সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চান।
এক প্রশ্নের উত্তরে মাওয়া জানান, দেশের দুখি মানুষদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিকসেবা চালু করেছেন। এমবিবিএস ডাক্তারদের গ্রামে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন। তিনি এমবিবিএস পাশ করে শেখ হাসিনার উদ্যোগের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে গ্রামেই চিকিৎসক হিসেবে জীবন কাটাতে চান। কেননা তার চিকিৎসা প্রদানের প্রধান টার্গেট হবেন গ্রামের দুখি মানুষ। এর বাইরেও তিনি নাটোরের দুখি মানুষদের জন্য নিজ খরচে একটি এতিমখানা চালু করতে চান বলেও দাবী করেন মাওয়া।
বাবা মারা যাওয়ার পর নানা-নানীর আশ্রয়ে মা’র সহায়তায় পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন মাওয়া। তিনি কোন ভাল কলেজ থেকে এসএসসি’র মত এইচএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চান। এসএসসির মত এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ অর্জন করতে চান। এরপর এমবিবিএস কোর্স সমাপ্ত করতে চান। কিন্তু বর্তমান দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এমবিবিএস পাশ করার অর্থনৈতিক সামথ্য নেই মাওয়া বা তার পরিবারের। এক্ষেত্রে সরকার আর দেশের ধনী শ্রেণীর সহায়তা পেলে সে বাবার স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মাওয়ার মা। এক্ষেত্রে তিনি স্বামীর স্বপ্ন আর মেয়ের সাধ পূরণে সরকার এবং দেশবাসীর সহায়তা কামনা করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস