রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
স্বর্ণের দাম আরও বাড়ল এবার পোশাকে নায়িকাদের নাম ফুটিয়ে হাজির ভাবনা সোনালী আঁশের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই: পাটমন্ত্রী অনিয়ম এড়াতে মোবাইল অ্যাপে চাল বিক্রি ৩০ দিনের মধ্যে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ফেরতের দাবি মাগুরায় রেলপথ শিগগিরই চালু হবে : রেলমন্ত্রী যিনি দেশ বিক্রি করতে চেয়েছিল আপনি তো ওনারই সন্তান হেফাজত নেতা মামুনুল হক ডিবিতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত: আইজিপি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে স্কুলসামগ্রী বিতরণ শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের জাল ভোট পড়লেই কেন্দ্র বন্ধ: ইসি হাবিব ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি স্বাক্ষর ইসলামী ব্যাংকের মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন শুরু ডেপুটি গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে বাধা নেই বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভারত ভ্রমণে তিনদিনের নিষেধাজ্ঞা ঢাবিতে বিষমুক্ত ফল নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন গোপালগঞ্জের সেপটিক ট্যাংকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ২ শ্রমিক নিহত দিল্লির তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে ভোট বর্জনই বিএনপির আন্দোলন: এ্যানি আফগানিস্তানে বন্যায় ৫০ জনের মৃত্যু

মুসলমান যাযাবরদের হঠাতেই জম্মুতে ধর্ষণ ও খুন ৮ বছরের কন্যা শিশুকে?

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮
  • ১৬৩ বার পড়া হয়েছে
শিশু হত্যার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ

বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: ভারত শাসিত জম্মুকাশ্মীর রাজ্যে একটি আট বছরের কন্যা শিশুকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যার যে মামলার তদন্ত করছিল সেই রাজ্যের পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ, তারা আদালতের কাছে চার্জশীট পেশ করেছে তদন্তে ঘটনার যে বিবরণ উঠে এসেছে, তা এক কথায় বীভৎসতার চূড়ান্ত পর্যায়

এও বলা হয়েছে চার্জশীটে, যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী যাযাবর সম্প্রদায়কে হিন্দু প্রধান এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আর তাদের মনে আতঙ্ক তৈরি করার জন্য ঐ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

অপহরণ, ধর্ষণ আর হত্যার ঐ মামলায় আট জন অভিযুক্তের মধ্যে চার জন পুলিশ কনস্টেবল বা কর্মকর্তা। এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে তাদের মুক্তির দাবীতে আর গোটা ঘটনা কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবীতে জম্মু অঞ্চলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দেখিয়েছে, রাস্তায় নেমেছিলেন জম্মু বার এসোসিয়েশনের সদস্যরা। ধৃতদের মুক্তির দাবী ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে একটি আট বছরের কন্যা শিশুকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যার যে মামলার তদন্ত করছিল সেই রাজ্যের পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ, তারা আদালতের কাছে চার্জশীট পেশ করেছে। তদন্তে ঘটনার যে বিবরণ উঠে এসেছে, তা এক কথায় বীভৎসতার চূড়ান্ত পর্যায়।নিয়ে ওই সব বিক্ষোভে দেখা গেছে ভারতের জাতীয় পতাকাও।

কী অভিযোগ আনা হয়েছে চার্জশীটে?

জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ বলছে, আট বছরের ঐ কন্যা শিশুকে জম্মু-র কাঠুয়া জেলায় তার বাড়ির কাছ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।

যাযাবর গুজ্জর জাতি-গোষ্ঠী শিশুটিকে এবছরের ১০ই জানুয়ারি অপহরণ করা হয়, যখন সে পোষা ঘোড়া আর ভেড়াগুলিকে চড়াতে নিয়ে গিয়েছিল।

জম্মুর যাযাবর সম্প্রদায়

পরের দিন তার পরিবার হীরানগর থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করে।

সাত দিন পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায় কাঠুয়া জেলারই বসানা গ্রামে।

ঘটনাটি নিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষোভ বিক্ষোভ বাড়তে থাকে, একসময়ে বিষয়টি পৌঁছায় রাজ্য বিধানসভায়।

সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ক্রাইম ব্রাঞ্চকে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার কথা ঘোষণা করেন।

তদন্তের শুরুতেই দেখা যায় যে ওই কন্যা শিশুর খোঁজ করতে পুলিশ কর্মীরা যখন জঙ্গলে গিয়েছিলেন, তার মধ্যেই এমন দুজন ছিলেন, যারা মৃতদেহটির পোশাক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর আগে একবার জলে ধুয়ে নিয়েছিল।

সন্দেহ বাড়ায় তাদের জেরা শুরু হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে ঐ দুজন পুলিশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুজনেই ওই হীরানগর থানায় কর্মরত ছিলেন।

তল্লাশি চালিয়ে বসানা গ্রামের একটি মন্দির থেকে কিছু চুল খুঁজে পান তদন্তকারীরা। তাঁদের সন্দেহ হয় যে ঐ চুল অপহৃত কন্যা শিশুটির হতে পারে।

জম্মু উপত্যকা।

চার্জশীটে বলা হয়েছে, ওই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন সাঞ্জি রাম নামে যে ব্যক্তি, তিনিই নিজের পুত্র আর ভাইপোর সঙ্গে ওই কন্যা শিশুকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

গুজ্জর সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করাই উদ্দেশ্য ছিল, যাতে তারা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

চার্জশীটে বলা হয়েছে, স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে এরকম একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে বাকারওয়াল বা যাযাবর সম্প্রদায়ের ওই মানুষরা গরু জবাই করে আর মাদকের কারবার করে।

এ নিয়ে এর আগে দুই তরফেই পুলিশের কাছে বহু অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ জমা হয়েছে।

চার্জশীটে পুলিশ এটাও উল্লেখ করেছে যে ধর্ষণের আগে ঐ মন্দিরে কিছু পুজোও করা হয়।

৬০ বছর বয়সী সাঞ্জি রাম, তার ছেলে বিশাল আর নাবালক ভাইপো, চার পুলিশ কর্মী এবং আরেক ব্যক্তি গোটা ঘটনায় সরাসরি যুক্ত।

ঐ কন্যা শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে আসার পরে তাকে মাদক খাইয়ে অচেতন করে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যেই তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।

অভিযুক্তদের মধ্যে যে নাবালক রয়েছে, সে তার চাচাতো দাদা সাঞ্জি রামের ছেলে বিশালকে উত্তর প্রদেশের মীরঠ শহর থেকে ডেকে আনে ফোন করে যাতে, সে-ও ওই কন্যা শিশুটিকে ধর্ষণ করতে পারে।

জ্ম্মু পুলিশের টহল

চার্জশীটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, টানা ধর্ষণ করার পরে যখন অভিযুক্তরা ঠিক করে যে এবার ওই কন্যা শিশুটিকে মেরে ফেলার সময় হয়েছে, তখন একজন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী অন্যদের বলে, “এখনই মেরো না। দাঁড়াও। আমি ওকে শেষবারের মতো একবার ধর্ষণ করে নিই।”

তারপরে ওই পুলিশ কর্মী নিজে চেষ্টা করে কন্যা শিশুটিকে হত্যা করতে, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।

শেষে নাবালক অভিযুক্তই ওই কন্যা শিশুকে হত্যা করে।

তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয় একটা পাথর দিয়ে।

ময়নাতদন্তে জানা গেছে যে ওই কন্যা শিশুটিকে মাদকের বড়ি খাইয়ে তারপরে ধর্ষণ করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভ

ক্রাইম ব্রাঞ্চের তদন্তে যখন একের পর এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হতে থাকেন, তখন থেকেই শুরু হয় প্রতিবাদ।

প্রথমে স্থানীয় একটি সদ্য গঠিত হিন্দু সংগঠন বিক্ষোভে নামে।

সেখানে হাজির ছিলেন বিজেপির বেশ কিছু নেতা-কর্মী।

তাদেরই একজন, বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক ও বিধানসভার সদস্য অশোক কউল বিবিসির প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, “এলাকার মানুষের সঙ্গে তো থাকতেই হবে। তবে দলের তরফে এই ঘটনার নিন্দা তো করাই হয়েছে। আর আমরা চাইছি কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো – সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক।”

বিজেপিও জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে সরকারের অংশীদার।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

ঐরকম একটি বিক্ষোভ মিছিলের ছবি রয়েছে বিবিসির কাছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে মিছিলকারীদের হাতে রয়েছে ভারতের জাতীয় পতাকা।

ওই বিক্ষোভ মিছিলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইট করে মন্তব্য করেছিলেন, “ধর্ষণের অভিযোগে ধৃতদের পক্ষ নিয়ে মিছিল হচ্ছে দেখে আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি। এই সব বিক্ষোভে আবার জাতীয় পতাকা রয়েছে! আমি আতঙ্কিত। এটাতো জাতীয় পতাকার অবমাননা।”

এর পরেই অবশ্য বিজেপির নেতৃত্ব ওইসব বিক্ষোভ থেকে নিজের দলের লোকদের সরিয়ে নেন।

তবে এবার বিক্ষোভে নামে আইনজীবীরা।

গ্রেপ্তারীর প্রতিবাদে জম্মুতে যে হরতাল হয়েছিল ১১ই এপ্রিল, তাতে যুক্ত হয়ে রাস্তায় নেমেছিল বার এসোসিয়েশন।

তবে সব আইনজীবী বা বার এসোসিয়েশন যে এই ঘটনায় ধৃতদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন, এমনটা নয়।

ক্রাইম ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা যাতে চার্জশীট পেশ না করতে পারেন, তার জন্য রীতিমতো ঘেরাও চলতে থাকে।

আদালত চত্বরেই চলতে থাকে স্লোগান। শেষমেশ অনেক রাতে ক্রাইম ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা চার্জশীট জমা করতে সক্ষম হন।

ওই কন্যা শিশুর পিতা বিবিসিকে বলেছেন, “যখন দেখছিলাম মেয়ের ওপরে অত্যাচারীদের সমর্থনে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল হচ্ছে, মনে হল আমার মেয়েটা আরও একবার ধর্ষিতা হল।”

‘ঘোড়াগুলো ফিরল, মেয়েটা আর ফিরল না’

ওই কন্যা শিশুর মা বিবিসিকে জানিয়েছেন, “আমরা তো জীবজন্তু পালন করেই জীবনযাপন করি। ছয়মাস জম্মুতে বাকিটা কাশ্মীরে থাকি আমরা। নদনদীর কাছাকাছি। মেয়েটা জন্তুগুলোকে ভীষণ ভালবাসত। ১০ তারিখ দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বলল, আমি জঙ্গলে যাই – ঘোড়াগুলোকে নিয়ে আসি। ঘোড়াগুলো তো ফিরে এসেছে, মেয়েটা আর ফিরল না।” সূত্র: বিবিসি বাংলা।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com