বাংলা৭১নিউজ, রাজশাহী: দিনে দিনে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এ সমস্যা আরো বেশি বাড়ছে। ১০ বছর আগেই বরেন্দ্র অঞ্চলের বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। কুয়াগুলো পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানির সঙ্কট আরো চরমে পৌঁছেছে। তীব্র দাবদাহে এ অঞ্চলের খাল-বিল, পুকুর-ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে।
গভীর নলকূপের সরবরাহ করা পানিই এখন এ অঞ্চলের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে। সেখানেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ১৮০টি গভীর নলকূপও পানির অভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়া হওয়ার পথে আরো অনেক গভীর নলকূপ।
মাত্র এক দশক আগেই বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালাগুলো সারা বছরই পানিতে পরিপূর্ণ ছিল। প্রতিটি বাড়িতে ছিল নলকূপ ও কুয়া। তবে এসব এখন অতীত।
বরেন্দ্র অঞ্চলের উচু এলাকা হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর, পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা উপজেলায় এক যুগ আগে ৭০ থেকে ৮০ ফিট নিচে পানির স্তর থাকলেও বর্তমানে তা নেমে ১৪০ থেকে ১৬০ ফিট নিচের স্তরে চলে গেছে। পানির স্তর নিচে নামার ফলে বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো এখন টিউবওয়েলের বিপরীতে গ্রামে বিদ্যুৎ চালিত সার্ব-মার্সেবল পাম্প বসাচ্ছেন।
এছাড়াও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বরেন্দ্র অঞ্চলে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপের পাশে বড় বড় পানির ট্যাংকি বসিয়ে গ্রামে গ্রামে সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প (বিএমডি) ১২৪টি উপজেলায় ১৫ হাজার ১০৫টি গভীর নলকূপ বসিয়েছে। এর মধ্যে ১৮০টি পানির অভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আর ১৩০টি অল্প পরিসরে পানি উঠছে বা নাজুক অবস্থায় আছে এবং ১২০ টি পুনোরায় আরো বেশি গভীর করে ঠিক করা হয়েছে।
শুধু তানোর উপজেলায় বিএমডিএ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর নলকূপের সঙ্গে সংযুক্ত করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬২টি ট্যাংকের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। পাশাপাশি গ্রাম উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা এলজিএসপি, এডিপি, সুশিলোন, ডাসকো ও শরিফ মিলে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গ্রামে ৩০৭টি সার্ব-মার্সেবল পাম্প দিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করে গ্রাম উন্নয়নে কাজে করে চলছে।
এছাড়াও এ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানায় আরো ২৫০টি মত সাব-মার্সেবল পাম্প রয়েছে। এখন পুরো উপজেলায় সাপ্লাই পানি উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নিজামপুর গ্রামের রবিন জানান, গ্রামের টিউবওয়েল ১০ বছর আগেই পানির অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। খাবার পানিতে তাদেরও গভীর নলকূপের উপরে নির্ভর হতে হচ্ছে।
এদিকে, চৈত্রের দাবদাহ ও প্রচণ্ড খরায় নওগাঁর সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। এদের মধ্যে সাপাহারের অবস্থা আরো বেশি নাজুক। উপজেলা সদরের নিকটবর্তী মানিকুড়া দিঘীপাড়া গ্রামে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অত্যাধিক হারে নিচে নেমে যাওয়ায় ওই গ্রামের কূপগুলির পানি শুকিয়ে গেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এমএমএইচ