বাংলা৭১নিউজ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: প্রথমে সমস্বরে স্লোগান, তারপর চেয়ার ছোড়াছুড়ি। একপর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণ। এ সময় মঞ্চ ছেড়ে চলে যান ক্ষুব্ধ অতিথিরা। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন পণ্ড হতে সাকল্যে সময় লাগল ২০ মিনিট। গতকাল মঙ্গলবার নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হয়েছিল এ সম্মেলন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। স্লোগানের পর চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হলে দুই দফায় মঞ্চ থেকে নেমে নেতা-কর্মীদের কাছে হাতজোড় করে শান্ত হতে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু মন্ত্রীর অনুরোধ রাখেননি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বরং দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রীর অনুরোধের সময়ই ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর মন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা চলে যান মঞ্চ ছেড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সম্মেলন শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। শুরুতেই বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তখনো সম্মেলনস্থলের শেষ দিক থেকে স্লোগান দেন ছাত্রলীগের কিছু কর্মী। জাকির হোসাইন তাঁদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি আধঘণ্টার মতো বক্তব্য দেন। এরপর বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাসেল হোসেন। তখনো স্লোগান চলছিল।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তৃতীয় বক্তা কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাকিব হোসেনের বক্তব্যের সময় সম্মেলনস্থলের পেছন দিকে শুরু হয় চেয়ার ছোড়াছুড়ি। এরপর ককটেল বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সবাই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন মঞ্চ থেকে নেমে নেতা-কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। মঞ্চে অন্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যাওয়ার সময় মোশাররফ হোসেনের পথ আটকানোর চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। তিনি তাঁদের ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বলেন, ‘এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের কমিটিতে প্রথম ঘটল। আমরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সংগ্রহ করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হয় মাসখানেক আগে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৬৮ জনের জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কেন্দ্র সাতজনকে বাদ দিয়ে ৬১ জনকে এই দুই পদের জন্য চূড়ান্ত করে। এদের মধ্যে সভাপতি পদে ১৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন ৪৬ জন প্রার্থী। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার কথা ছিল।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যেটা ককটেল বলা হচ্ছে সেটি হয়তো ককটেল ছিল না। আতশবাজির মতো কিছু হবে হয়তো। দু-তিনটি শব্দ শুনেছি আমরা। তবে ঘটনাস্থলে যেহেতু আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সম্মেলন পণ্ড হওয়ার পর চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালামের কক্ষে গতকাল বিকেলে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বখতেয়ার সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়বসহ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বলেন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য কাউন্সিল হয়নি। নতুন কমিটিতে কাদের আনা যায় সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সম্মেলনস্থলে ককটেল বিস্ফোরণ হয়নি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে এসে কেউ হয়তো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে শাস্তি হবে।’
উত্তর জেলার সম্মেলনের আগের দিন গত সোমবার বিকেলে নগর ছাত্রলীগের উদ্যোগে লালদীঘি মাঠে আয়োজিত প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভায় নেতা-কর্মীরা চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেন। এ কারণে তড়িঘড়ি করে সভা শেষ করতে হয়।
এ ছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়। এর জের ধরে পরদিন প্রক্টর কার্যালয় ও ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ।
বাংলা৭১নিউজ/বিকে