বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সবাই একসঙ্গে শান্তিতে থাকতে চাই : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা’ বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত বিএসএফ মোতায়েন সৌদিতে সড়কে প্রাণ গেল ময়মনসিংহের দুই যুবকের, পরিবারে শোকের মাতম বিএনপিকর্মী মকবুল হত্যা: সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর কারাগারে প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণ করুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল্লাহ শফিকে পুলিশে দিল ছাত্র-জনতা বইমেলায় স্টলের জন্য আবেদন করা যাবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার নতুন সূচি প্রকাশ ভারত থেকে ২৫ হাজার টন চাল আসছে বৃহস্পতিবার আইএসও/আইইসি ২৭০০১:২০২২ সনদ অর্জন করলো পূবালী ব্যাংক কলকাতার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন পি কে হালদার নিজ দেশে ফিরে যেতে রোহিঙ্গা মুফতি-ওলামাদের সমাবেশ ভিডিও: কাজাখস্তানে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে নিহত অন্তত ৪০ উপকূলীয় মানুষের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে কোস্টগার্ড দেখে নিন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি, বাংলাদেশের ম্যাচ কবে কোথায়? ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ, স্নাতক পাসেও আবেদনের সুযোগ

শুভঙ্করের ফাঁকির ফাঁদে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ কাজ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬
  • ২১৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা:  নেই কাজে। যেভাবে চলছে তাতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করাটাও অসম্ভব। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারও নাখোশ। পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে মানিকগজ্ঞের হরিরামপুর উপজেলা রক্ষা প্রকল্পের এমন বেহাল দশার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে কাজের মূল নকশায় পরিবর্তন।

প্রকল্পটির অর্থ যোগানদাতা সংস্থা এডিবি’র (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) কনসালট্যান্টদের চাপের মুখেই নকশায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে করে কাজের পরিধি বাড়লেও প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে চলছে গড়িমসি। অন্যদিকে, স্থানীয় জনরোষ ধামাচাপা দিতে এ্ কাজে বড় ধরণের শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এতে করে শুধু অর্থেরই অপচয় হবে; কিন্ত ওয উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প তার কোন সুফল পাওয়া যাবে না।

এই প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতি থেকে দেখা যায়, শুরু থেকেই কাজের গতি ছিল মন্থর। বর্তমানে পদ্মার পানি বাড়ছে এবং এখানে বড়জোর আর ১৫ দিনে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এর পরই বর্ষা শুরু হয়ে যাবে। তখন প্রকল্প এলাকায় ভাঙ্গনের ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে যতটুকু কাজ এই শুষ্ক মৌসুমে সম্পন্ন হয়েছে তার কতটুকু আগামী শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত টিকে থাকবে-এ প্রশ্ন এলাকাবাসীর মধ্যে। হরিরামপুর বাজারে বসে কথা হয় বয়স ষাট পেরিয়ে যাওয়া স্থানীয় মনতাজ মাদবরের সাথে। তিনি জানান, পদ্মার ভাঙ্গনে তার পৈত্রিক বসতবাড়ী দু’বার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

তার মতে, কয়েক বছর আগেও দরিকান্দিতে ব্লক বিছানো হয়েছে। কিন্ত যেভাবে কাজ হওয়ার কথা সেভাবে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সবকিছুই এখন নদী গর্ভে। বর্তমানে যেভাবে কাজ চলছে-এই কাজও আসন্ন বর্ষা পারি দিয়ে টিকে থাকবে কীনা-তা নিয়ে সন্দেগও ও সংশয় প্রকাশ করেছেন মনতাজ মাদবর।

পদ্মার ভাঙ্গনরোধে চলমান নদী তীর সংরক্ষন কাজের ব্যপারে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের কাজে চলছে বড় ধরণের শুভঙ্করের ফাঁকি। যেভাবে কাজ চলছে তাতে এক যুগেও এটা শেষ হওেব না। বরং আসন্ন বর্ষা পারি দিয়ে আগামী শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত এই কাজ টিকে কীনা-সময়ই তা বলে দেবে। তিনি বলেন, কাজ শুরুর পর যেভাবে নকশা বদলানো হলো-এটা আমরা প্রতহ্যাশা করিনি। পুরো ৩ কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পাউবো থেকে জানা যায়, এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এখানে দু’টি প্যাকেজে কাজ করছে। ডিপিপি অনুযায়ি, ৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের শুরু ও শেষ যথাক্রমে রামকৃষ্ণপুর থেকে হারুকান্দি ইউনিয়ন পর্যন্ত। নকশা পরিবর্তন হওয়ায় প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে কাজ চলছে। শুণ্য থেকে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করার অনুমতিপত্র থাকলেও পরিবর্তিত নকশায় কাজের পরিধি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে দশ কিলোমিটার। এই সাড়ে তিন কিলোমিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ নিয়েও চলছে বড় ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিলের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্ত কাজের গতি প্রমাণ করে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।

জানা যায়, পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে হরিরামপুর উপজেলা, রামকৃষ্ণপুর, দরিকান্দি, হারুকান্দি ইউনিয়ন, আন্ধারমানিক বাজার, বয়রা ইউনিয়ন রক্ষায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। নানান চড়াই-উৎড়াই পারি দিয়ে ২০১৪ সালের ২৫ আগষ্ট এই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। তখন এই প্রকল্পের টেন্ডার নকশায় নদী তীর থেকে জিও ব্যাগ ডাম্পিং সীমা ছিল ৫০ মিটার। পরবর্তিতে ওয়ার্কি ড্রইংয়ে নদী তীর থেকে ডাম্পিং এরিয়া ধরা হয় ৫৯ মিটার। গত ১৬ মার্চ নতুন নকশায় কাজের ভীত দূর্বল করে দেয়া হয়েছে। এতে নদী তীর থেকে জিও ব্যাগ ডাম্পিং এরিয়া ধরা হয়েছে মাত্র ১৫ মিটার। অর্থাৎ ৪৪ মিটারই নেই। এই যে শুভঙ্করের ফাঁকি-এনিয়ে নানাভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জনগণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারও এতে খুশি নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডেও এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন নকশা অনুযায়ি, কাজ করার অর্থ ৫০ কোটি টাকা পদ্মায় ফেলে দেয়া। যে উদ্দেশ্য সাধনে এই প্রকল্প-তা সুফল স্থানীয় অধিবাসীরা পাবে না। তাছাড়া এরকম দূর্বল কাজ কেন করা হচ্ছে তাও ওই কর্মকর্তার বোধগম্য নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুণ্য থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে এই প্রকল্পের নতুন নকশা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্ত এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সকলকে খুশি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সে মোতাবেক কাজের শক্তিশালী ভীতকে দূর্বল করে ডাম্পিং এরিয়া ৫৯ মিটার থেকে কমিয়ে ১৫ মিটারে আনা হয়। মূলত এডিবি’র কনসালট্যান্ট টিম প্রধান মি. ক্যানুড আপত্তি তোলেন এই বলে যে, শুন্য থেকে ৩ কিলোমিটারের মাঝে যে চর পড়েছে তা সংশ্লিষ্ট এরিয়াকে ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করবে। তার আপত্তির কারণেই নকশায় পরিবর্তন আনা হয় এবং কাজের ভীত দূর্বল হয়ে পড়ে। তবে মি. ক্যানুড যে তত্ত্ব দিয়ে এই ৩ কিলোমিটার এলাকা বাদ রেখে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন, ওই এলাকায় যেয়ে দেখা যায়-সেখানে জোড়ে সোরেই ভাঙ্গন চলছে এবং এলাকাবাসীর ঘরবাড়ী, আবাদি জমি চলে পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক মো. আমিনুল হক বলেন, এই কাজের কন্ট্রাক্ট ভেরিয়েশন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্ধিত সাড়ে ৩ কিলোমিটার এর কাজের অতিরিক্ত অর্থ কাজের অংশ হিসাবেই ধরা হবে। এক্ষেত্রে নতুন করে কোন টেন্ডারের প্রয়োজন হবে না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারই এটি করতে পারবেন।

নকশা পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এডিবি’র কনসালট্যান্টরা যেটি ভাল মনে করেছেন-তারা সেই সিদ্ধান্তই দিয়েছেন। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেইএই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব কীনা-জানতে চাইলে বলেন, আমরা আশাবাদী।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com