বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
২০২৪ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বছর: আসিফ মাহমুদ ইএফটি উদ্বোধন, বছরের প্রথমদিনে বেতন পেলেন এমপিও শিক্ষকরা নতুন বছরে ২ কোটি লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার খুলল এস আলমের বন্ধ হওয়া ৯ কারখানা ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করল ইউক্রেন বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা মেট্রোরেলের লাইনে ফানুস, রাতভর পরিষ্কার করলো ডিএমটিসিএল হিন্দুরা নয়, আগস্টের পর ভারতে বেশি গেছেন মুসলিমরা বছরের প্রথম দিনে রাজধানীর বায়ু ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ইইউতে ফিরতে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় তুরস্ক ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত ১২৮ জন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর যেসব এলাকায় ভূমি বিষয়ক সকল হয়রানি দূর করার অঙ্গীকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত সমন্বয়ক গ্রেফতার নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা উচ্ছ্বাস-উল্লাসে নতুন বছর উদযাপন পুলিশের জ্যাকেট পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সাংবাদিক সজীবকে সিলেটের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে রংপুর রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরাতে ফিলিপাইনের সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

ভাষাসৈনিক ডা. আলী আজমল বুলবুল

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
  • ২৭৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,শামছুর রহমান শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : ইতিহাসের অমর স্বাক্ষর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের এক লড়াকু সৈনিক ডা. আলী আজমল বুলবুল। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবীতে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী যাঁরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উদ্দীপ্ত হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন, তাঁদের প্রথম দশজনের একজন ডা. আলী আজমল বুলবুল।

১৯২৮ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলাধীন পাড়কোলা গ্রামে এক সম্ভান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন আলী আজমল। তাঁর পিতা মুহম্মদ সোলায়মান এবং মাতা জোবেদা খাতুন। পিতার চাকুরী সুত্রে আজমলের লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীতেই। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।

এই উভয় পরীক্ষাতেই তিনি অভিভক্ত বাংলায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সম্মিলিত মেধা তালিকায় যথাক্রমে ১৩তম এবং ১১ তম স্থান লাভের অসাধারণ গৌরব অর্জন করেন। অতঃপর ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান লাভ করে কোলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চলে আসেন তিনি। তিনি যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি নেতৃত্ব দানের ছিল অসাধারণ যোগ্যতা।

ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র-সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নে ১৯৪৮ সালে ছাত্র সমাজ ছিল বিক্ষুদ্ধ। সে বছর হরতাল চলাকালে ঢাকা সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং এবং ২ নং গেটে পিকেটিং করার সময় প্রথম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আজমল। সেই থেকে ৫২ এর ২১ শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মোট ১১ বার কারাবরণ করেন এবং ১৭ বার পুলিশের তালিকায় মোষ্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আসামি হিসাবে নাম ওঠে তাঁর।

এসব কারনে কর্তৃপক্ষ তাঁকে মেডিকেল কলেজ থেকে বহিস্কার করেন। ফলে তাঁর আর এম.বি.বি.এস পাশ করা হয়নি। ১৯৫৪ সালে আলী আজমল নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে ফিরে এসে তিনি শাহজাদপুর উপজেলা সদরে মণিরামপুরে পিতার ক্রয়কৃত বাড়িতে সর্বসাধারনের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত হন। আমৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই অত্যন্ত সাধারণ একটি টিনের বাড়ীতে একভাবে নামমাত্র ফি গ্রহন করে চিকিৎসার মাধ্যমে হৎদরিদ্রদের চিকিৎসায় নিরত থাকেন।

সর্বসাধারণের কাছে তিনি ‘বুলবুল ডাক্তার’ নামেই পরিচিত ছিলেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাঁর যে অসাধারণ সাফল্য এবং সুনাম-সুখ্যাতি ছিল তাতে তিনি রীতিমত অর্থ-বিত্তের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু চিকিৎসাকে তিনি মানুষের সেবা হিসাবে গ্রহন করেছিলেন, অর্থ উপার্জনের পন্থা হিসাবে নয়। তিনি খুব সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৫২ সালে ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই এম.বি.বি.এস ডিগ্রি গ্রহন করেন। কিন্তু ডা. আজমল তাঁর চারপাশের মানুষ এবং রোগীদের ছেড়ে আর কখনোও ডিগ্রি লাভের পেছনে ছোটেন নি। আজমল সব ধরনের বই এবং পত্রিকার নিষ্ঠাবান পাঠক ছিলেন।

তিনি যা কিছু পড়তেন, তার মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। বাংলা, ইংরেজি, অংক, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল বিষ্ময়কর। জনাব আজমলের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ ছিল নিজের চেয়ে বড়। তাইতো ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে আমৃত্যু তিনি দেশের মানুষের অধিকার ও দাবী আদায়ে ছিলেন সোচ্চার। নিজের আরাম-আয়েশ ও স্বার্থ ত্যাগ করে সমাজের মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। এভাবেই একদিন ডা. আজমল জীবন সায়াহ্নে চলে আসেন। তাঁর জীবনের সমস্ত কাজ কর্মের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী খুরশিদা আজমল পুতুল। সেই স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি অনেকটা চুপচাপ হয়ে যান। ক্রমশ বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। শ্বাস কষ্টের সাথে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।

২০০২ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে একটানা ৫ দিন অচেতন থাকার পর ৩ অক্টোবর পরলোক গমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর শাহজাদপুরবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহ.)’র মসজিদ ও মাজার সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর কবরে পুষ্পার্পণসহ তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। তিন ভাই ছয় বোনের মধ্যে ডা. আলী আজমল ছিলেন সবার বড়। মেঝ ভাই আহম্মদ আলী আজমল এম,কম বিসিআইসি’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ছোট ভাই ব্যাবসায়ী আক্তার আলী আজমল বি,এ পৈত্রিক বাড়ীতেই আছেন। জীবিত তিন বোনের মধ্যে ছোট দুই বোন মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা।

আজমলের একমাত্র ছেলে এডভোকেট কবির আজমল বিপুল বি.এ (অনার্স) এম.এ (ইংরেজি) এবং পুত্রবধূ নাছিমা জামান কলেজের অধ্যাপিকা। বড় মেয়ে ঢাকা শাহীন কলেজের শিক্ষক রওনক আজমল বন্যা বি.এ (অনার্স) এম.এ। তাঁর স্বামী জনাব আবু করিম সাবেক সচিব এবং দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত কবি। মেঝ মেয়ে ডা. ফেরদৌসী আজমল মেঘনা এবং তাঁর স্বামী ডা. আব্দুর রহমান স্বাস্থ্য বিভাগের পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। ছোট মেয়ে কারনাজ আজমল রূপসা এম.এ একজন সুগৃহিনী এবং তাঁর স্বামী একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অফিসার। উল্লেখ্য, আলী আজমল বুলবুলের বাবা একজন পদস্থ অফিসার ছিলেন এবং অবসর গ্রহনের পর ‘শাহজাদপুর ইব্রাহিম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

এই শিক্ষা-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ পরিবারটি ডা. আলী আজমলের ভাষা আন্দোলনের আসাধারণ অবদানের কারনে আরো গৌরবন্বিত হয়েছে। ডা. আলী আজমল বুলবুল ছিলেন একজন সমাজতান্ত্রিক চেতনা সমৃদ্ধ রাজনীতি সচেতন উদার অসম্প্রদায়িক মুক্তবুদ্ধির মানুষ। তিনি দেশের শেষ্ঠ সন্তানদের একজন। মহান ভাষা আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা পালন করতে গিয়ে তিনি তাঁর অত্যন্ত মেধাবী সম্ভাবনাময় জীবন থেকে ছিটকে পড়েন। কিন্তু নিভৃতচারী প্রচার বিমুখ এই মানুষটির এখনো যথার্থ মূল্যায়ন হয় নি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com