ঠিকাদারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুব হোসেন। এ-সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ জাগো নিউজের কাছে রয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও ঠিকাদার উভয়ই লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
২০২৪ সালে ৩০ জুন হাসপাতালের ঠিকাদার মো. সাহাদৎ হোসেন খন্দকার ইসলামী ব্যাংকের গাইবান্ধা শাখার ৪০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। পরে চেকটি হাসপাতালের তত্তাবধায়ক মাহবুব হোসেন সিরাজগঞ্জের সোহাগপুর শাখায় তার নিজ অ্যাকাউন্টে নেন।
ঠিকাদার সাহাদৎ হোসেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নাতনি সাবেক হুপই ও গাইবান্ধা সদর আসনের সাবেক এমপি মাহবুব আরা গিনির আস্থাভাজন বলে জানা গেছে।
হাসপাতল সূত্রে জানা যায়, ২৫০ শয্যা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে প্রতিবছর এমএসআর ও পথ্যসামগ্রীর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এমএসআর দরপত্রে ওষুধ, যন্ত্রপাতি, লিলেন, গজ ব্যান্ডেজ, আসবাবপত্র কেনাকাটা করা হয়। আর পথ্যসামগ্রী দরপত্রের মাধ্যমে রোগীদের খাবার, স্টেশনারি ও ধোপা সরবরাহ করা হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে হাসপাতালের এমএসআর দরপত্রের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বর্ণা এন্টারপ্রারাইজ। প্রতিষ্ঠানটি বরাদ্দ পায় তিন কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য ডিজি ও লাইন ডিরেক্টরের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর পথ্যসামগ্রীতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় চার কোটি টাকা।
হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ২০২১ সালে ২৮ জুলাই যোগদান করেন মাহবুব হোসেন। যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ঘুস লেনদেনের কথা শুনছি। তত্ত্বাবধায়ক স্যার নাকি হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট্যান্ট নুর-এ ইসলাম হিরুর মাধ্যমে ঠিকাদারের কাছে লেনদেন করেন। তবে লেনদেনের অ্যামাউন্ট যে এত বেশি বিশ্বাস করতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক মো. নুর-এ ইসলাম হিরুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক স্যার আর হিসাবরক্ষক হিরু ভাই কোটি কোটি টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে লেনদেন করে আসছেন। ১০টা লেনদেন করেছেন। তার মধ্য একটা লেনদেনে ধরা খাইছে। এর সুবিচার হওয়া দরকার।’
লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেন হাসপাতালের ঠিকাদার সাহাদৎ হোসেন খন্দকার। তিনি বলেন, ‘৪০ লাখ টাকা ঘুস কি শুধু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককেই দিয়েছি? অনেককেই দেওয়া লাগছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কেরটাই শুধু আপনার কাছে আসছে, এ বিষয়ে ধরলে এত বছর যাদের ঘুস দিয়েছি তাদের কাছ থেকে টাকাগুলো ফেরত নিয়ে দিতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ককে ঘুস দেওয়ার বিষয়ে তো আমি আপনাকে কোনো অভিযোগ করিনি। স্যারের সঙ্গে চেকের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের এই ডকুমেন্টগুলো কই পাইলেই, সেটা বলেন।’
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘যে ঠিকাদার আমাকে টাকা দিয়েছে তাকে গিয়ে বলেন। আমি কি তার কাছ থেকে জোর করে নিয়েছি? কোন দপ্তরে লেনদেন হয় না? সবাইকে আগে ধরেন। লেনদেনের বিষয়ে সব অফিসারদের বিচার হলে, তখন আমারও হবে।’
এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হারুনর রশিদ বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেননি। এই প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনলাম। আপনাদের প্রচারের মাধ্যমেই অসাধু কর্মকর্তাদের অবৈধ কাজগুলো প্রকাশ পাবে। তার বিরুদ্ধে নিউজ করেন। এদের ধরা দরকার। ঠিকাদারের কাছ থেকে লেনদেনের সুস্পষ্ট তথ্য পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ