বর্ষায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করে দিনাজপুরের খরস্রোতা আত্রাই নদী। নদীর কিছু কিছু অংশে ভাঙনসহ পাড় এলাকাকে প্লাবিত করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম শুরু হতেই সেই খরস্রোতা আত্রাই নদীতে জেগে উঠেছে বালুচর। দেখে মনে হতে পারে এটি একটি রাস্তা কিংবা নিচু সমতল ভূমি। অথচ এই নদীতে একসময় বড় বড় পালতোলা নৌকা চলত। এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক যোগাযোগের পথ।
আত্রাই নদীর উপর ৪৯২ মিটার দীর্ঘ জিয়া সেতুর নিচে নদীর বেশিরভাগ অংশই এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। যেখানে পানি রয়েছে, তাও অতি সামান্য। আবার, সেই পানির উপর ভাসমান বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। নদীর পাড় এলাকায় বসে একাকী সময় কাটানোর জন্য এটি একপ্রকার পার্কে পরিণত হয়েছে। নাব্যতা হারানো এই নদীর বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র।
দিনাজপুরের খানসামাসহ বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা আত্রাই নদী এখন শুধুই ধু-ধু বালুচর। খানসামা উপজেলার পশ্চিম সীমানা জুড়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী আত্রাই নদী একসময় এই জনপদের বিকাশের প্রধান ভিত্তি ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে বালুচর। নদী হারিয়েছে নাব্যতা। অনেক জায়গায় স্থানীয়রা বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করছে, কেউ কেউ গাছের চারা রোপণ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা ও শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “খরস্রোতা আত্রাই নদী এখন যেন মরা খালে পরিণত হয়েছে। একসময় নদীর জলে কয়েক’শ জেলে পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। এখন পানির অভাবে জেলেরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। উত্তাল নদীটি আজ শুধুই বালুচর।
তারা আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীটিতে পানি বৃদ্ধি পেলেও, খরা মৌসুমে আবার পানি নেমে যায়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে নদীর পানি অত্যন্ত কমে গিয়ে হাঁটুর নিচে নেমে আসে। এ সময় এলাকার মানুষ নদী পারাপারের জন্য হেঁটে চলাচল করে।
একসময় বর্ষার সময় এই নদীর তর্জন-গর্জনে নদী তীরবর্তী মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হতো। জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও আশপাশের অসংখ্য জেলে পরিবার বসবাস করত। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই নদী। জীবিকার প্রয়োজনে জেলেরা রাতদিন নৌকায় করে জাল ফেলে মাছ ধরত। কিন্তু বর্তমানে পানি কমে যাওয়ায় মাছও দুর্লভ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা দ্রুত নদী পুনঃখননের দাবি জানিয়েছেন। যদি প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আত্রাই নদী পুরোপুরি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ