গরিব আমেরিকানদের পেটে লাথি দেয়ার পাশাপাশি ক্যান্সার-সহ জটিল রোগে আক্রান্ত স্বল্প ও মাঝারি আয়ের আমেরিকানদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার মত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভয়ংকর অমানবিক একটি নির্বাহী আদেশ সম্বলিত স্মারকের বিরুদ্ধে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিল ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালত।
সোমবার রাতে জারিকৃত দুই পাতার ঐ স্মারকটি সর্বত্র বিতরণ করা হয় হোয়াইট হাউজের বাজেট অফিস থেকে। সেখানে বলা হয়েছিল, ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় কার্যকর হবে ঐ স্মারকে উল্লেখিত নির্দেশাবলী। অর্থাৎ গরিব আমেরিকানদের পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয়ে সহায়তার ‘ফুডস্ট্যাম্প’, স্বল্প আয়ের রোগীদের চিকিৎসা-সেবার জন্যে মেডিকেইড/হেল্থ ইন্স্যুরেন্স, স্বল্প আয়ের মানুষের বাড়ি-ভাড়ার ভর্তুকি, হেল্থ হোমকেয়ার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে। এবং সে অনুযায়ী সবকিছু বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ৮ কোটিরও অধিক আমেরিকানকে চরম অনিশ্চয়তায় নিপতিত করে। সর্বত্র হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভের বিস্তারও ঘটছিল। এমনি অবস্থায় ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল কোর্টে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশনাটির বিরুদ্ধে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়াসহ আরও ২০ স্টেটের এটর্নী জেনারেলরাও সম্মিলিতভাবে আরেকটি মামলা করেছেন। সেটিরও একই নির্দেশনা এসেছে বলে জানা গেছে। আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি কংগ্রেসের উভয়কক্ষে ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এমন অমানবিক আচরণের জন্যে।
সিনেটর চাক শ্যুমার এবং কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরি আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কংগ্রেসে পাশ হওয়া জনগুরুত্বপূর্ণ কোন আইনকে হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়ার আইনগত এখতিয়ার নেই প্রেসিডেন্টের। বুধবার উভয় কক্ষের ডেমক্র্যাট সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানরা যৌথ সভা ডেকেছেন ট্রাম্পের এমন গণবিরোধী আচরণ রুখে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে।
দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বেশ কিছু আদেশ জারি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রতিদিনই অসংখ্য আদেশ জারি করছেন। সেসব নির্দেশের প্রায় সবগুলোই ট্রাম্পের নির্বাচনি অঙ্গিকারের পরিপূরক। কিন্তু ফুডস্ট্যাম্প, মেডিকেইড, হেল্থ হোমকেয়ার সার্ভিস, নার্সিং হোম, বাড়ি ভাড়ার ভর্তুকি, স্টুডেন্ট লোন, স্কলারশিপসহ ফেডারেল প্রশাসনের প্রদত্ত সকল অর্থ বন্ধের এই নির্দেশনাটি সবাইকে চমকে দিয়েছে। সোস্যাল সিকিউরিটি ও মেডিকেয়ার সার্ভিস ছাড়া অন্যসব প্রোগ্রাম থেকেই ফেডারেল প্রশাসনকে গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় ঐ নির্দেশে।
জানা গেছে, ৪ কোটি ২১ লাখ আমেরিকান পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয়ের জন্যে ‘ফুডস্ট্যাম্প’ খাতে প্রতিমাসে ফেডারেল থেকে মাথাপিছু ২১১ ডলার করে পাচ্ছেন। এটি বন্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ চিকিৎসা-সেবা বাবদ হেল্থ ইন্স্যুরেন্সের সুবিধা পাচ্ছেন। এই চিকিৎসা-সেবার বড় একটি অংশ আসে ফেডারেল অনুদান থেকে।
অসুস্থ পিতা-মাতা-ভাই-বোনকে নিজ বাসায় চিকিৎসা-সেবা প্রদান করেও মোটা অর্থ আয় করছেন কয়েক কোটি আমেরিকান। এর বড় একটি অংশ হচ্ছেন জুইশ, রাশিয়ান, চীনা এবং বাংলাদেশি। এই হোমকেয়ার খাতের পুরো অর্থ আসে ফেডারেল অনুদান থেকে।
এ ধরনের আরও কিছু অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস বন্ধের নির্দেশনা ছিল ঐ স্মারকে। তাই, মাননীয় আদালতের সাময়িক স্থগিতাদেশেও স্বস্তি পাচ্ছে না স্বল্প ও মাঝারি আয়ের মানুষেরা। টাম্পের এমন গণবিরোধী আচরণকে স্থায়ীভাবে রুখে দিতে ডেমক্র্যাটরা প্রকাশ্যে এবং অনেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানও গোপনে মাঠে নেমেছেন। কারণ, এই নির্দেশনা কার্যকরী হলে দু’বছর পর মধ্যবর্তী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।
হোয়াইট হাউজের ম্যানেজমেন্ট ও বাজেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ম্যাথিউ ভেইথ স্বাক্ষরিত ঐ স্মারকে উপরোক্ত খাতের বরাদ্দ বাতিলের কথা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ