বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দল নয়, প্রার্থীর এজেন্টদের প্রশিক্ষণে জাতিসংঘের সহায়তা চায় ইসি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম নিয়ে রিভিউ শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি দুর্বার রাজশাহীই থামালো রংপুরের জয়রথ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন, নবীন পুলিশদের আইজিপি ফখরুলের বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন নাহিদ রোজার আগে পণ্যের দাম নিয়ে যে বার্তা দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহারে আরও সময় চায় ইসরাইল টিউলিপকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণে চাপ বাড়ছে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়সীমা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ সাধন চন্দ্রের আয়কর নথি জব্দ, গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন কারখানা চালু করতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান বেক্সিমকোর কর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার সফর থেকে ভালো কিছু রেজাল্ট পাবো : প্রেস সচিব জাতীয় জীবনে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য অপরিসীম : তারেক রহমান চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলেন এলজিইডি কর্মকর্তা, দেহ ছিন্নভিন্ন ছাত্র আন্দোলন স্মৃতিরক্ষায় ফেনীতে নির্মিত হচ্ছে ‘শহীদ চত্বর’ পাচারের সময় ট্রাকভর্তি নতুন বই জব্দ দ্রুত নির্বাচনের কথা বললে আমার অনেক সমালোচনা হয় : ফখরুল বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত ৩৬৭ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক বাউফলে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত ২

লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষে অর্থনৈতিক বিপ্লব

বরগুনা প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের সওদাগরপাড়া গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক চাষি লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে বদলেছেন নিজেদের ভাগ্যের চাকা। প্রায় এক যুগ আগেও লবণাক্ততার কারণে ধান চাষে লোকসানের মুখে থাকা এই গ্রাম এখন পরিচিতি পেয়েছে ‘সবজি গ্রাম’ নামে।

ফেলে রাখা এসব জমিতে বছরজুড়ে এখন সম্মিলিত ভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলাচ্ছেন তারা। বর্তমানে এখান থেকে বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথমে স্থানীয় কৃষক শাহাদাত মাতুব্বরের উদ্যোগে শুরু হয় সবজি চাষ। তার সফলতা দেখে ধীরে ধীরে গ্রামের অধিকাংশ চাষিই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে প্রায় ৬৫০ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে শিম, করলা, শসাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন তারা।

তাদের দেখাদেখি বর্তমানে এ গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতেই এখন সবজি চাষ হয়। এতে একদিকে চাষিদের অর্থনৈতিক জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। অপরদিকে বেকার অনেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

তালতলীর সবজি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চলছে কৃষকদের ব্যস্ততা। যতদূর চোখ যায় শুধু শিম গাছ। বেট কেটে মাটি উঁচু করে মাচা পদ্ধতিতে বিশেষ পরিচর্যায় লাগানো প্রতিটি গাছেই ঝুলছে প্রচুর ফুল ও শিম। চাষিদের পাশাপাশি অনেক বেকার নারী-পুরুষ দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে শিম তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সব জমিতে এক ধরনের সবজি চাষ করায় বোঝার উপায় নেই কোনটি কার জমি। সাধারণ মানুষ না বুঝলেও যার যার জমিতে কাজ করছেন সবাই। প্রতিদিন শিম তোলার পর বস্তায় ভরে স্থানীয় পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রির জন্য পৌঁছে যায় বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

 

স্বামীর সঙ্গে সবজি চাষে সমানভাবে কাজ করছেন নুরজাহান বেগম। তিনি বলেন, ‘আগে ধান চাষ করতাম। ধান চাষে তেমন লাভ হয়নি। গ্রামের একজনকে সবজি চাষ করতে দেখে ৫০ হাজার টাকায় জমি কিনে সবজি চাষ শুরু করি। এ বছর এক মৌসুমে সবজি ক্ষেত থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার করলা ও শসা বিক্রি করেছি।

এখন ক্ষেতে শিম গাছ আছে। প্রতিদিন বিকেলে পাইকাররা তোলা শিম দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। সপ্তাহ অন্তর তারা বিক্রির টাকা আমাদের বুঝিয়ে দেন। বর্তমানে সবজি চাষ করে আগের তুলনায় ভালোই লাভবান হচ্ছি।’

চাষিদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘তিনি একসময় নদীতে মাছ ধরতেন। সবজি চাষে সফলতা দেখে জমি বায়না করে সবজি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে লাভের টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন।

একই গ্রামের চাষি নাজনীন বেগম বলেন, ‘একসময় ধান চাষ করলেও আয় কম ছিল। সবজি চাষে লাভ দেখে জমি কিনে শিম ও অন্য সবজি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বড় ছেলে মাস্টার্স পাস করেছেন। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।’

আরেক চাষি মো. আব্দুল মান্নান ফকির বলেন, ‘এলাকায় প্রথমে তিনজন সবজি চাষ শুরু করেন। তাদের দেখে পার্শ্ববর্তী অনেকেই চিন্তা করলাম, সবজি চাষে লাভ আছে। ধান চাষে তেমন কোনো লাভ নেই।

পরে আমার জমিতে ধানের পরিবর্তে সবজি চাষ শুরু করি। এ বছর একটি সবজি ক্ষেত থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা বিক্রি হবে। বর্তমানে সওদাগরপাড়ার প্রায় সব চাষিই ধান চাষ বাদ দিয়ে সবজি চাষ করতে শুরু করেছেন।’

সবজি চাষে সফলতা এনে দেওয়া কৃষি উদ্যোক্তা শাহাদাত মাতুব্বর বলেন, ‘প্রথমে আমি সবজি চাষ শুরু করি। এখন প্রায় ২২০ জন সবজি চাষি আছেন। তাদের অধীনে দৈনিক ২-৩ জন শ্রমিক কাজ করেন। শিম তোলার কাজে স্থানীয় ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের অনেক তরুণ-তরুণী কাজ করছেন।

দৈনিক ৩০০ টাকা বেতনসহ খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবাই মিলেমিশে সবজি চাষ করি। যার যার জমি নিজেই পরিচর্যা করেন। দিন শেষে সব সবজি হিসেব করে এক জায়গায় জড়ো করা হয়। পরে পাইকার এসে নিয়ে যান। বছরে দুই মৌসুমে এই গ্রাম থেকে বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬-৭ কোটি টাকার সবজি বিক্রি করা হয়।’

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিএম রেজাউল করিম জানান, লবণাক্ত জমিতে মাটি কেটে উঁচু করে সবজি চাষে এই গ্রাম এখন সাফল্যের উদাহরণ।

কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এখানকার চাষিরা বছরে কোটি টাকার সবজি বিক্রি করছেন। সওদাগরপাড়া গ্রামের এই সাফল্য অন্য অঞ্চলের চাষিদেরও অনুপ্রাণিত করছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এখানকার সবজি চাষিরা ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘বরগুনার তালতলী উপজেলার সবজি গ্রাম একটি মাইলফলক। বিশেষ করে এখানে শ্রমিকদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার বেশি। গত বছর মরিচের আবাদ থেকে তারা উচ্চমূল্য পাওয়ায় এ বছর শিমের আবাদ করেছেন। তারা প্রতিটি ফসলই সম্মিলিত চাষ করেন। তাই তাদের সফলতা বেশি।’

তিনি বলেন, ‘এই সবজি গ্রাম থেকে আমরা আশা করছি বরগুনা সারাদেশে একটি মডেল হিসেবে দেখা দেবে। কারণ এত বড় সম্মিলিত সবজি চাষ সারাদেশে আমার জানামতে আর কোথাও নেই। আমরা কৃষি বিভাগ এ ধরনের কাজকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে সব সময় তাদের সঙ্গে আছি।’

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com