বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মোবাইল কলরেট ও ওষুধে বর্ধিত কর প্রত্যাহার ট্রাম্পের জন্য বাইডেনের রেখে যাওয়া চিঠিতে কী লেখা ছিল? মজুত-সরবরাহ ঠিক রাখতে ১০ লাখ টন চাল ও গম আমদানি করবে সরকার বইমেলা ড্রোনে মনিটরিং, থাকবে সোয়াট-বোম্ব ডিসপোজাল টিম ঠাকুরগাঁওয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত শূন্যরেখায় কৃষক ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ মার্কিন নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে: নজরুল ইসলাম বিদিশার বিরুদ্ধে সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছেন আহত শিক্ষার্থীরা কুমিল্লায় নাশকতার মামলায় অব্যাহতি পেলেন খালেদা জিয়া ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিএনপি-খেলাফত মজলিস সংলাপ সব কিছু নির্ভর করছে মালয়েশিয়ার ওপর: প্রবাসী কল্যাণ সচিব বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনতে মিশনগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ আলোচনা দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত রাবি সমন্বয়ক শহীদ পাপিয়া সারোয়ারকে দেয়া হবে মরণোত্তর সম্মাননা গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা আবেদন খারিজ ‘প্রতিশোধের’ লড়াইয়ে চিটাগংয়ের বিপক্ষে বোলিংয়ে ঢাকা প্লেনে তল্লাশি চালিয়ে বোমা ও বোমা সদৃশ কিছু পাওয়া যায়নি পদোন্নতিপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপকদের রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শুভেচ্ছা জিকে শামীম ও তার মায়ের দুর্নীতি মামলার রায় ৩০ জানুয়ারি

বড় অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ খাত

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপলোড সময় বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক ভোগান্তি। চাকরিচ্যুত, বদলি, মামলা, গ্রেফতারসহ নানা পদক্ষেপের পরও থামছে না সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনের তেজ। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী গ্রীষ্মে সারা দেশের গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। 

উল্লেখ্য, ৮২টি সমিতির মাধ্যমে গ্রামে ৩ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহককে (প্রায় ১২ কোটি মানুষ) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি।

বোর্ড ও সমিতি একীভূত করে অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং স্থায়ী পদের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করার দাবিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেন সমিতির কর্মীরা।

বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে বিভিন্ন দফায় কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। বোর্ড ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর কোনো সমাধান না আসায় বিদ্যুৎ বিভাগ আগস্টে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করে দেয়।

সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ-আরইবি অসহযোগিতা এবং বিদ্যমান সিস্টেম বহাল রাখার চিন্তাভাবনার কারণে ওই কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। শুধু তাই নয়, আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ। বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা ঢাকায় বসে নিম্নমানের মালামাল ক্রয় করে দুর্নীতি-লুটপাট করছেন। তাদের কেনা এ নিম্নমানের মালামালের কারণে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে।

অপরদিকে আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, সমিতির লোকজন রাষ্ট্রদ্রোহিতা করছেন। তারা ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান আরইবিকে ব্যর্থ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। আরইবিকে ব্যর্থ করে দেশের ৮০ শতাংশ এলাকার বিদ্যুৎব্যবস্থায় বিপর্যয় তৈরি করে জনরোষ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আরইবি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। আমরা তার কর্মীদের উৎকণ্ঠা নিয়ে অবহিত। একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলে সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এসএম জিয়া-উল-আজিম বলেন, জাতীয় কমিটি যে রিপোর্ট দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে এক বছর ধরে আন্দোলন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মীরা। আলোচনা, বিক্ষোভের মাধ্যমে চলতে থাকা আন্দোলন অক্টোবরে চরম আকার ধারণ করে। বিদ্যুৎ শাটডাউনের মতো ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি সামলাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) কঠোর অবস্থানে যায়। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত, তাৎক্ষণিক বদলি ও মামলা দায়ের করে। শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধানে সরকার ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। তবে এখনো দ্বন্দ্ব মেটেনি আরইবি ও পবিসির মধ্যে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে গ্রীষ্মে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করতে পারে-এমন আশঙ্কা খাতসংশ্লিষ্টদের। কারণ, গরমে ঘনঘন ট্রান্সফরমার পুড়ে বিতরণ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়। সময়মতো এসব দুর্ঘটনার সুরাহা না হলে গরমে দীর্ঘসময় কষ্ট করতে হবে গ্রাহকদের।

৩০ সেপ্টেম্বর আগের দাবিতেই সারা দেশে মানববন্ধন এবং প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন পবিসের কর্মীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি-তাদের দমাতে ১৬ অক্টোবর সমিতির ১০ কর্মকর্তাকে কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত এবং সেদিন রাতেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করে আরইবি।

পরের দিন (১৭ অক্টোবর) সমিতিগুলোর বিক্ষুব্ধ সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে। অনেক অঞ্চলে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন আলোচনা এবং তাৎক্ষণিক কাঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এর মধ্যে আরইবি আরও ১৪ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে। এ সময় আরইবির তিন মামলায় ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়, মোট আসামি করা হয় ১৭১ জনকে। স্ট্যান্ড রিলিজ এবং ওএসডি করা হয় আরও অর্ধশতাধিক কর্মীকে। গ্রেফতার কর্মীদের মধ্যে বর্তমানে দুজন ছাড়া বাকিরা জামিনে মুক্ত আছেন।

আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কারাবরণকারী চাকরিচ্যুত মাগুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো. রাহাত জানান, একই প্রতিষ্ঠানে দ্বৈতনীতি পরিহারসহ দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় চাকরিচ্যুত এবং হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন কারাবরণকারী চাকরিচ্যুত নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম মনির হোসেন।

এ ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে আহ্বায়ক করে উল্লিখিত পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে পবিসগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে। এখন আরইবির সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রয়োজনে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গেও বসা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য।

সূত্র জানিয়েছে, নভেম্বর থেকে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এসএম জিয়া-উল-আজিম বিভিন্ন সমিতি পরিদর্শন করেন এবং কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কর্মীদের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিচ্যুতদের স্বপদে বহাল করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি সাময়িক। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য আশ্বাস দেন তিনি। ডিসেম্বরের শুরুতেও চেয়ারম্যান সমিতির ৮ কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং কারাবন্দি কর্মকর্তাদের কাজে নেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

১২ ডিসেম্বর কারাবন্দি ৯ কর্মকর্তা জামিনে মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে সমিতির পক্ষ থেকে আরইবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনার জন্য যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। উলটো জানা যায়, চেয়ারম্যান কার্যালয় থেকে ৭ জানুয়ারি বরখাস্তকৃতদের চাকরি পুনর্বহালের আবেদন চিঠির মাধ্যমে নাকচ করে দিয়েছেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, গত এক মাসে কয়েক ধাপে বিভিন্ন সমিতির প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে।

সদ্য বদলি হওয়া কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (আইটি) জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমি জানান, তার বাড়ি শরীয়তপুর, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে কিছুদিন আগে মাদারীপুর সমিতি থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট সমিতিতে বদলি করা হয়। একজন কর্মজীবী নারী হওয়া সত্ত্বেও তার প্রতি প্রতিষ্ঠানের এ আচরণ প্রতিহিংসামূলক।

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এজাজ হোসেন জানান, আরইবির কাঠামো সেকেলে হয়ে গেছে। এর সংস্কার জরুরি। দেশব্যাপী লাইন বসে গেছে। এখন আরইবির কাজ অন্য বিতরণ কোম্পানির মতোই শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।

তাই তার গঠনও অন্য বিতরণ সংস্থাগুলোর মতো হতে পারে। তবে সংস্কারের জন্য সময় দিতে হবে। এজন্য দুপক্ষকেই ধৈর্য ধরতে হবে। রাজনৈতিক সরকার এলে বিষয়টির কার্যকর সমাধান হতে পারে-এমন আশাবাদ ড. এজাজের।

বাংলা৭১নিউজ/এআরকে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com