পাঁচ বছরে ১২ শতাংশের বেশি ধান সংগ্রহ করতে পারেনি রাজশাহী খাদ্য বিভাগ। নানা ভোগান্তির কারণে সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে অনীহা কৃষকদের।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০-২১ মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৯ হাজার ৮৪৫ মেট্রিকটন। এ বছর সংগ্রহ করা হয় এক হাজার ১০৮ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
২০২১-২২ মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৩ হাজার ৪০৪ মেট্রিকটন। এ বছর সংগ্রহ করা হয় পাঁচ হাজার ৫৭৫ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্য ১২ শতাংশ।
২০২২-২৩ মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫ হাজার ৭৬৭ মেট্রিকটন। এ বছর সংগ্রহ করা হয় মাত্র ৭ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্যমাত্রার ০ দশমিক ১৫ শতাংশ।
২০২৩-২৪ মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩১ হাজার ৫৫৬ মেট্রিকটন। এ বছর সংগ্রহ করা হয় ৩ হাজার ৪৮২ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্যমাত্রার ১১ শতাংশ।
সর্বশেষ ২০২৪-২৫ মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৬ হাজার ৩৫৯ মেট্রিকটন। এ বছর এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয় ৩৯৫ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্যমাত্রার ০ দশমিক ৭ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিভাগে চলতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। সরকারি বেঁধে দেওয়া ১৩২০ টাকা মন ধানের বিপরীতে কৃষক বাজারে পাচ্ছে ১৫ থেকে ১৬শ টাকা। বাজারদর বেশি হওয়ায় গুদামে আমন ধান দিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের। এ অবস্থায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান অনেকটা ব্যর্থ সরকারি গুদামগুলোতে।
এনামুল হক নামের এক কৃষক বলেন, সরকারের কাছে বিক্রি করার চেয়ে বাহিরে বিক্রি করাই ভালো। সরকার দাম দিবে ১৩২০ টাকা আর বাহির দেড় হাজার টাকার ওপরে। তাও আবার বাকিতে কিনবে দরকার। আর বাহিরে নগদ।
তিনি আরও বলেন, আমরা ঋণ করে ধান চাষ করি। ফলে ধান ওঠামাত্র পাওনাদার চলে আসেন। তাহলে কীভাবে সরকারের কাছে ধান দিবো? তাই আমরা বাইরের ধান বিক্রি করি।
পবার কৃষক আলিমুদ্দিন বলেন, আমরা তো বাইরে বেশি দাম পাচ্ছি। তাহলে লোকসান করে ক্যানো কম দামে সরকারের কাছে দিবো। সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার চেয়ে খোলা বাজারে ধান বিক্রিতে ঝামেলা কম, দামও বেশি।
রাজশাহীর এফএম অটোরাইস মিলের মালিক মো. মতিউর রহমান বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে বিপাকে মিলারা। গুনতে হচ্ছে লোকসান। লাইসেন্স বাঁচাতে বাধ্য হয়ে সরকারকে চাল দিচ্ছেন।
তবে বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা মো. মাইন উদ্দিন বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি ভয় কৃষকের আগ্রহ কমছে। তবে এ বিষয় নিয়ে সরকার কাজ করছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ অধ্যাপক ড. আমিনুল হক বলেন, সাধারণত সরকার ধান উঠার ১০-১৫ দিন পরে ধান কেনে। এতে করে দেরি হয়ে যায়। পাশাপাশি দামও কম দেওয়া হয়। এ জন্য কৃষক আগ্রহ হারাচ্ছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ