গর্ভকালীন সময়টি প্রতিটি নারীর জন্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এ পর্যায়ের প্রতিটি মুহূর্ত একজন নারীর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সে পরিবারের অনাগত নতুন অতিথির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য গর্ভধারণের পূর্ব থেকেই কিছু রোগ বিষয়ে নারীদের সচেতন থাকা খুব জরুরি।
ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় টাইপ-১ ডায়াবেটিস, টাইপ-২ বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের এবং তাদের শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন—জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশুর জন্ম, মৃত প্রসব, নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই অপরিণত শিশুর জন্ম নেওয়া এবং সিজারিয়ান ডেলিভারির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ওজন নিয়ে শিশুর জন্ম নেওয়া এবং ভবিষ্যতে জন্ম নেয়া এমন শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এজন্য গর্ভধারণের পূর্ব থেকেই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, শারীরিক ব্যায়ামসহ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকির সাথে সাথে শিশুর জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে। এক্ষেত্রে মায়েদের প্রি-একলাম্পশিয়া (উচ্চ রক্তচাপজনিত একটি জটিলতা), একলাম্পশিয়া (উচ্চ রক্তচাপের সাথে খিঁচুনি), ব্রেইন স্ট্রোক ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে। এবং শিশুর স্বাস্থ্য জটিলতা যেমন সময়ের পূর্বে বাচ্চা প্রসব, কম ওজন এবং অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ, গর্ভের শিশু তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদানের অভাবের সম্মুখীন হতে পারে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমানো, ফল ও পুষ্টিকর খাবারে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এর পাশাপাশি নিয়মিত প্রেসার চেকআপ করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
হাইপোথাইরয়েডিজম
হাইপোথাইরয়েডিজম হলো থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত রোগ। গর্ভাবস্থায় এর অন্যতম প্রধান কারণ শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি। থাইরয়েডের ঘাটতির ফলে মা এবং শিশুর নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন—গর্ভপাত হওয়া, পূর্ণ সময়ের পূর্বেই শিশুর জন্ম, কম ওজনের শিশুর জন্ম, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর (সিএইচএফ)। এ ছাড়াও হাইপোথাইরয়েডে আক্রান্ত মায়ের জন্ম নেয়া শিশুর স্নায়বিক বৃদ্ধি ও বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের কারো মাঝে ক্লান্তি বোধ, ঠান্ডা তাপমাত্রা সহ্য করতে না পারা, ওজন বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য, হাত ঝিমঝিম করা বা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে থাইরয়েড টেস্ট করে নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় চারবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন
এ সব জটিলতা থেকে মা এবং শিশুদের নিরাপদ রাখতে গর্ভাবস্থায় সকল মায়েদের অ্যান্টিনেটাল চেক আপে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গর্ভাবস্থায় একজন মা অন্তত চারবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন, যা ৮ থেকে ১২ সপ্তাহে একবার, ২৪ থেকে ২৬ সপ্তাহে একবার, এরপর ৩২ সপ্তাহে এবং ৩৬ থেকে ৩৮ সপ্তাহে একবার।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে ডা. সাদিয়া হোসেন জানান, গর্ভকালীন সময়টি প্রতিটি নারীর জন্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এজন্য গর্ভধারণের পূর্ব থেকেই কিছু রোগ বিষয়ে নারীদের সচেতন থাকা খুব জরুরি। উল্লিখিত সব রোগ থেকে মুক্ত থাকতে গর্ভাবস্থার পূর্বেই মায়েদের সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ সময়টি অতিবাহিত করা উচিত।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস