খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণাঙ্গ ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, মোটরসাইকেল ও কম্প্রেসার তৈরি করা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কর বাড়ানোর ফলে দেশীয় মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি ও কম্প্রেসারের দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণাঙ্গ ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ারকন্ডিশনার ও কম্প্রেসার তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কেবল এই শিল্পের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের উপর প্রদেয় আয়কর হার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের উপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশকিছু শর্তও আরোপ করেছে এনবিআর। এগুলো হলো- শিল্প প্রতিষ্ঠানটি কম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এর অধীন নিবন্ধিত হতে হবে, আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ১২ নং আইন) এর ধারা ৭৬ এর উপধারা (৫) এবং (৬) সহ অন্যান্য বিধানাবলি পরিপালন করতে হবে, নিজস্ব মোল্ড ও ডাইস তৈরির ক্ষমতা থাকতে হবে, নিজস্ব পলিউরেথেন ফোমিং প্ল্যান্ট, পাউডার আবরণ প্লান্ট এবং সক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টের ব্যবস্থা থাকতে হবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে, বিদ্যমান ব্যবসার পুনর্গঠন বা এইরূপ ব্যবসা বিভাজন দ্বারা গঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে মেশিনারি অথবা স্থাপনা হস্তান্তরের মাধ্যমে গঠিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে পারবে না ও এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অব্যাহতিপ্রাপ্ত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান এই প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত কোনো শর্ত বা শর্তাবলি পরিপালনে ব্যর্থ হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রদত্ত অনুমোদন প্রত্যাহার করতে পারবে।
এই প্রজ্ঞাপন ২০২৫-২০২৬ করবর্ষ থেকে কার্যকর হবে এবং এটি ২০৩২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে এবং শিল্পের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দিচ্ছে-যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বলবত থাকার কথা ছিল।
এদিকে মোবাইল ফোন সেবায় বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে অনুমোদন দিয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানা গেছে। দুটি মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমোদন মিলেছে। এখন প্রজ্ঞাপন হলে তা কার্যকর করা যাবে।
জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইলে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর দিতে হয় ২০ দশমিক ৪ টাকা। অর্থাৎ, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর বাবদ কাটা পড়ে ৫৪ দশমিক ৬ টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূরক শুল্ক আরও ৩ শতাংশ বাড়ালে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা।
যার মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ কাটবে ২৯ দশমিক ৮ টাকা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স কাটবে ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর কাটবে ২০ দশমিক ৪ টাকা। গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা।ফলে গ্রাহক ১০০ টাকায় ব্যবহার করতে পারবেন মূলত মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ