প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে ‘ঘাপটি মেরে থাকা পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা : প্রেক্ষিত টেক্সটাইল সেক্টর’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
জাহিদ হোসেন বলেন, আজকের পত্রিকা খুললেই দেখবেন, একটি মামলায় (হত্যা মামলা) তাদের (আওয়ামী লীগের) দুজন নেতাকে আসামি করা হয়েছিল… ইনকোয়ারি চলছে…। ইনকোয়ারি কর্মকর্তা তাদের নাম বাদ দিয়ে … অর্থাৎ ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার জন্য যখন যাচ্ছে তখন আবার ওই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটি প্রতিরোধ করেছে।
তিনি বলেন, অর্থাৎ ওরা ঘাপটি মেরে আছে…। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বারবার বলছি যে, আপনারা আপনাদের প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিগত স্বৈরাচারের দোসরদের যদি চিহ্নিত করে সরিয়ে দিতে না পারেন তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আপনারা প্রতিরোধ করতে পারবেন না।
বুধবার প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন পুলিশের একজন তদন্ত কর্মকর্তা।
অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকেও। তবে আদালতে ওঠার আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে যায়।
‘বিড়াল মারতে হবে’ উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, অতএব আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, বিড়াল নাকি প্রথম রাত্রেই মারতে হয়। বাংলাদেশে একটি উদাহরণ আছে, বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন, উনিও কিন্তু প্রথম রাত্রে বিড়াল মেরেছিলেন। এজন্যই পরবর্তী সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছিল।
‘আমরা ইউনূস স্যারের (প্রধান উপদেষ্টার) প্রতি আস্থাশীল, পৃথিবীর মানুষেরও আস্থা আছে। দেশের মানুষ একদম নিঃস্বার্থভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করছে। কাজেই সরকারের একেবারে বলিষ্ঠ, আরও যুগোপযোগী ও দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
‘তা না হলে স্বৈরাচারের দোসররা থামবে না। তারা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘাপটি মেরে আছে, তারা কিন্তু ফণা তোলার জন্য, আপনাকে (মুহাম্মদ ইউনূস) বিভ্রান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে, করবে, করতেই থাকবে। কাজেই বিষদাঁত ভাঙতে হলে স্বৈরাচারের দোসরদের চিহ্নিত করুন, তাদের প্রশাসন এবং সরকারের আশপাশ থেকে সরিয়ে দিন’- এ প্রসঙ্গে যোগ করেন জাহিদ হোসেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন, মানুষের অধিকার দ্রুত ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে মানুষ আপনাদের সাধুবাদ জানাবে, ইতিহাসও তখন আপনাদের ধারণ করবে।
‘ঐক্য অটুট রাখতে হবে’ জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, আজকে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্তের শপথ নিয়ে ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করবেন না। জাতি ৫ আগস্ট ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে।
তিনি বলেন, জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হতো তাহলে সবাই আমরা ব্যর্থ হতাম। কাজেই সবাইকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ঐক্য ধরে রাখতে যেটি প্রয়োজন তা হলো কমন এনিমি চিহ্নিত করা এবং দ্রুততার সঙ্গে জনগণকে তার অধিকার আদায়ের সুযোগ দেওয়া। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোন পথে যাবে, দেশ কাদের ধারণ করবে এবং আগামীদিনের বাংলাদেশ কেমন হবে।
জেটেব সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম