ইয়ান বিশপ যথার্থই বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে দ্রুততম পেসারকে পেয়েছে। হয়তো তার দেখানো পথে আরো অনেকেই আসবে। তবে এই মুখটাকে চিনে রাখুন। মাত্রই ২২ বছর বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আগুন ঝরিয়ে গেছে।’’
নাহিদ রানা তখন ৫ উইকেট পাওয়ার আনন্দে মশগুল। কিংসটনের মাঠ ছাড়ার পথে বিশপের প্রশংসা তার শোনার কথা নয়। কিন্তু শুনেছে পুরো বিশ্ব। বল হাতে আগুন ঝরিয়ে নাহিদ যা করেছেন তা রীতিমত মুগ্ধ করেছে সবাইকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে চুরমার করে ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তার দু্যতিময় বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
স্কোরবোর্ডে ১৬৪ রানের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের অ্যাটাকিং হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। নাহিদ রানার ফাইফার এবং তাসকিন, হাসান ও তাইজুলদের জ্বলে উঠার দিনে বাংলাদেশ ১৮ রানের লিড পায়। এরপর ব্যাটিংয়ে গিয়ে কাউন্টার অ্যাটাক ব্যাটসম্যানদের। তাতে লাভ-ই হয়ে। ইতিবাচক মানসিকতায় ব্যাটিং করে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ২১১ রানের লিড নিয়ে। ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে রান ১৯৩।
অ্যাটাক ও কাউন্টার অ্যাটাকে এই ম্যাচের নাটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হাতেই আছে। উইকেটের চরিত্র এবং খেলার পরিস্থিতি বিবেচনায় ২১১ রানের লিড ড্রেসিংরুমে সুবাতাস ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন কেবল শেষটা রাঙানোর পালা।
আগের ম্যাচে নাহিদকে বিশ্রাম দিয়ে এই ম্যাচের জন্য তৈরি করেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তা কাজে দিয়েছে ভালোভাবে। দ্বিতীয় দিন শর্ট অব লেন্থে বল করে একাধিক সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। পেয়েছিলেন কেবল ওপেনার লুইসের উইকেট।
গতকাল তৃতীয় দিনে একই কৌশলে বল করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করেছেন। উইকেটের পুরো ব্যবহার করেছেন নাহিদ। শর্ট বল করেছেন ব্যাটসম্যানদের বুক বরাবর তাক করে। তাকে খেলতে রীতিমত ভুগতে হয়েছে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের।
দিনের শুরুটা হয়েছিল ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের উইকেটের নিয়ে। ৩৯ রান করা ব্র্যাথওয়েট রানার শর্ট বলে ব্যাট সরাতে পারেননি। এরপর কেভাম হজ লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন রানার আরেকটি দ্রুততম বলে। কার্টিকে ৪০ রানে ফেরান হাসান মাহমুদ।
এরপর শুরু হয় ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল। শেষ ৮ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। কিমার রোচকে এলবিডব্লিউ করে নাহিদ পূর্ণ করেন টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ফাইফার। এছাড়া হাসান মাহমুদ ২ এবং তাসকিন, তাইজুল ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। সব মিলিয়ে বোলিং আক্রমণ ছিল দুর্দান্ত, বিষে ভরা।
ব্যাটিং বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের জায়গা। ওপেনিংয়ে এদিনও সুদিন ফেরেনি। প্রথম ওভারে জয় রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন। সেই ধাক্কা সামলে নেন সাদমান ও শাহাদাত। ৪৭ রানের জুটি গড়েন তারা। দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী রান তোলার চেষ্টায় শাহাদাত পেসার জোসেফকে তুলে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় করে ২৮ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন সাজঘরে।
মিরাজ চারে এসে প্রতি আক্রমণে রান তোলেন অনায়েসে। তাকে সঙ্গ দেন সাদমান। তবে দুজনই থেমে যান চল্লিশের ঘরে। সাদমান ৮২ বলে ৪৬ করেন ৭ বাউন্ডারিতে। মিরাজ ৩৯ বলে ৪২ করেন সমান বাউন্ডারিতে। সেখান থেকে লিটনের ২৫ ও জাকেরের অপরাজিত ২৯ রানে বাংলাদেশ আপারহ্যান্ডে থেকে দিন শেষ করেছে।
ম্যাচের ভবিষ্যত কী হবে তা সময়ই বলে দেবে। বোলাররা যেভাবে লড়াই করেছে তা সত্যিই মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ