তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসার নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাদপন্থীরা। এ সময় সাদ ও নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারী তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, সে বিষয়ে তারা প্রকাশ্য বাহাসের পাল্টা চালেঞ্জও ছুঁড়ে দিয়েছেন।
বুধবার (৬ নভেম্বর) প্রেস ক্লাবে ‘দাওয়াত ও তাবলিগের উলামা কেরাম ও সাধারণ সাথীবৃন্দ’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ চ্যালেঞ্জ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব আজিম উদ্দিন বলেন, ‘দাওয়াতে তাবলিগ বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ সংগঠন। এ দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে লক্ষ, কোটি মানুষ ইসলামের পথে এসেছেন এবং হেদায়েত লাভ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এই দাওয়াতি সংগঠনের বাৎসরিক সম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমা প্রায় ৫৭ বছর ধরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তথাকথিত ‘জুবায়েরপন্থি’ তাবলিগের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ দেশের কতিপয় উলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে ও মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত প্রোগ্রাম থেকে অসংখ্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। অথচ আমরা ৩ নভেম্বর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের আলেমদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। তবে জুবায়েরপন্থিদের উসকানিতে কতিপয় অদূরদর্শী আলেম আপসমূলক সমাধানে না এসে তাবলীগ ও বিশ্ব ইজতেমার ইস্যুতে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার হীনচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।’
এ পরিস্থিতিতে জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করার লক্ষ্যে সমাধানমূলক প্রস্তাব পেশ করে আজিম উদ্দিন তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির সাদ কান্ধলভী ও নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারি তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, সে বিষয়ে ৭টি শর্তের ভিত্তিতে ওপেন বাহাসের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, ‘দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানী ও পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীসহ ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরা এই প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জে বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাছাড়া সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতিতে এটি রেকর্ড ও সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।’
কাকরাইলের খতিব বলেন, ‘উভয় পক্ষের নির্দিষ্ট প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রকাশ্য বাহাসটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। বাহাসে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার নিশ্চয়তাসহ বিচারকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হতে হবে।’
ঘরোয়া বৈঠকে বসে সমস্যার সমাধান করতে চান উল্লেখ করে আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে জুবায়েরপন্থিরা অতিরিক্ত উৎসাহ নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক করে টানা ৭ বছর প্রথম পর্বে ইজতেমা করার সুযোগ করে নিয়েছে। অথচ তারা বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠককে উপেক্ষা করে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।’
পাঁচ দাবি :
১. বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
২. বিগত ৭ বছরের বৈষম্য দূর করে বিশ্ব ইজতিমার প্রথম পর্ব নিজামুদ্দীন মারকাযের অনুসারী মূলধারার তাবলীগী সাথীদের বুঝিয়ে দিতে হবে।
৩. কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতিমা ময়দানের বৈষম্য দূর করে তাবলিগের মূলধারার সাথীদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে।
৪. ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতিমা ময়দানে মূলধারার ২ জন সাথীকে হত্যা ও পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা নিউ মার্কেটে ৩ জন সাথীকে হত্যা ও চার শতাধিক সাথীকে মারাত্মক আহত করার দায়ে জুবায়েরপন্থিদের নামে দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
৫. সারা বাংলাদেশের সব মসজিদে ধর্মীয় উসকানি ও ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত সৃষ্টি হয়- এমন বক্তব্য নিষিদ্ধ করা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ