উত্তর কোরিয়া একটি নতুন ও শক্তিশালী ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করেছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দেশটি তার পূর্ব উপকূলের সমুদ্রের দিকে দূরপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে এটিই এখন পর্যন্ত সময়ের হিসেবে দীর্ঘতম উড্ডয়ন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল নাকাতানি বলেছেন, পিয়ংইয়ংয়ের অতীতের যে কোনও ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় এই ক্ষেপণাস্ত্রটি দীর্ঘতম সময় উড্ডয়ন করেছে। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়া নতুন ধরনের একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে, যা ৪ হাজার ৩৫০ মাইল উচ্চতা স্পর্শ করে। এটি পূর্ববর্তী সকল উৎক্ষেপণের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতায় পৌঁছায়, যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উচ্চতার ১৭ গুণ বেশি।
উত্তর কোরিয়া দীর্ঘ সময় ধরেই এমন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের উন্নয়নে কাজ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে সক্ষম হবে। উত্তর কোরিয়া এই মিসাইলের উৎক্ষেপণ এমন সময় ঘটালো যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া পিয়ংইয়ংয়ের রাশিয়ায় সেনা মোতায়েনের সমালোচনা করছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন বাকি রয়েছে।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এক বিবৃতিতে মিসাইল উৎক্ষেপণের স্থান থেকেই জানান, এই উৎক্ষেপণ উপযুক্ত সামরিক কার্যকলাপ। কারণ উত্তর কোরিয়ার শত্রুরা কোনও কারণ ছাড়াই আঞ্চলিক পরিস্থিতি উত্তেজিত করছে। তিনি আরও জানান, তার শাসনব্যবস্থা কখনোই পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি থামাবে না।
উত্তর কোরিয়া তাদের পরীক্ষামূলক মিসাইলগুলো প্রায় সরাসরি উপরের দিকে উৎক্ষেপণ করে, যাতে মিসাইলগুলো জাপান সাগরে (পূর্ব সাগরে) পতিত হয়। এই মিসাইল উৎক্ষেপণ উত্তর কোরিয়ার এ বছরের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা। এই উৎক্ষেপন এমন সময় হলো যখন ওয়াশিংটন এবং পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে কিমের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে।
কিম ইতিমধ্যেই হাজার হাজার সেনাকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়েছেন এবং কিছু সেনাকে ইউক্রেনের যুদ্ধে সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা উত্তর কোরিয়ার জন্য এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ। এই প্রথমবারের মতো কিম তার দেশের সেনাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছেন, যা মূলত কোরীয় উপদ্বীপের বাইরে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন বুধবার (৩০ অক্টোবর) পেন্টাগনে তাদের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়ার এই সেনা মোতায়েনের তীব্র নিন্দা জানান।
অস্টিন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের সাথে কীভাবে এই বিপজ্জনক ও অস্থিতিশীলতামূলক পরিস্থিতির মোকাবিলা করবো তা নিয়ে আলোচনা করেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো কর্মকর্তারা উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১০,০০০ সেনা মোতায়েনকে “খুবই গুরুতর ইস্যু” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলতে পারে।
সুত্র- দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট।
বাংলা৭১নিউজ/একে