শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
বনানীর সুইটড্রিম হোটেলে মদ, অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খাগড়াছড়িতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব হলেন দুই সাংবাদিক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৬ হত্যা মামলা ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬ শিক্ষার্থী আটক সম্পদের হিসাব দিতে হবে উপদেষ্টাদের, নীতিমালা অনুমোদন অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন যেসব দেশে অর্থপাচার হচ্ছে তাদের দায়ও কম নয়: টিআইবি হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম নেওয়া হলো সাবেক এমপি ফজলে করিমকে পদ্মায় ভেঙে পড়লো জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের টাওয়ার শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই: ফখরুল ‘নতুন কোনো ইটাভাটার অনুমতি নয়, ৩৪৯১টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হবে’ সময় থাকতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠান, ভারতের উদ্দেশে দুদু ইউক্রেনে যাচ্ছে ভারতের অস্ত্র: রিপোর্ট ঢাবিতে চোর সন্দেহে হত্যা : তিন অভিযুক্ত গ্রেফতার ভৈরবে স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রী ও তার প্রেমিকের মত্যুদণ্ড ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ফরেন রেমিট্যান্স হাউসের মতবিনিময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র পেলো ইসলামী ব্যাংক নেতানিয়াহুসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা গ্রেফতার ১ জন

চাকরিতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু ও আবেদন ফি বাতিলের আহ্বান

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপলোড সময় বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

‘রাষ্ট্রের এই অসম ও অপ্রতুল আয়োজনে বেকার শিক্ষার্থীরা ভালো নেই’ বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। বিষয়টি উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পিএসসির সংস্কার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকরির পরীক্ষা, নিয়োগ কার্যক্রম চালু করা এবং বেকারত্বের প্রেক্ষাপটে ‘প্রহসন’মূলক আবেদন ফি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি যেকোনো সময় আত্মহত্যা করতে পারি। ঠিক যতগুলো কারণে আমার বন্ধু মনজু গতকাল এসএম হলে আত্মহত্যা করেছে, আত্মহত্যা করার জন্য আমার কাছেও ঠিক ততোগুলো কারণ আছে।

উদ্যোম তারুণ্য-পেরোনো প্রান্তিক বয়সে এসে, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির নির্জনতায় বসে মাঝে-মাঝে আমি ভাবি- আমি এখন পরিচয়হীন, পরিচর্যাহীন-বেকার। আমি না ছাত্র, না পেশাজীবী। না কারো দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা আমার এখন হয়েছে, না আমার দায়িত্ব নিতে সমাজের আর আগ্রহ আছে। অর্থাভাবে ভীষণভাবে জর্জরিত। আত্মবিশ্বাস ভয়াবহ তলানিতে। মানসিকভাবেও ভীষণ বিপর্যস্ত।

কাটছাঁট করে এই দুর্মূল্যের বাজারে সত্তর টাকায় সারাদিন পার করতে হয়। ‘কড়া’ হয়েছে বলে ক্যান্টিন বয় যখন গরু দিতে চায়, টাকা বাঁচাতে শুষ্ক হাসি দিয়ে ডায়েটে থাকার অযুহাতে সবজি নিয়ে আসতে বলতে হয়। লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে মাঝে মাঝে মাছ কিংবা মাংসের একটু ঝোলের জন্য ক্যান্টিন বয়কে বলতে গিয়েও থেমে যাই। ডিম-আলু-ডাল জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বর্তমান বাজারদরে এগুলোও এখন সাধ্যের বাইরে।’

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘অজানা এক লুপ্ত নক্ষত্রের মতো হারিয়ে যাওয়ার আগে, ভবিষ্যতের অপ্রত্যাশিত সব বিস্ময়ের মুখোমুখি হতে আমাদের স্বপ্ন ও আত্মবিশ্বাস-এ আমাদের সুস্থির থাকতে হবে। দীর্ঘ খড়া কাটিয়েও আবার যেমন প্রকৃতিতে বৃষ্টি নামে, শুকিয়ে যাওয়া নদীতেও আবার যেমন ঢেউ উঠে, আমরাও জানি, কষ্ট পেতে পেতে কোনো একদিন আবার আমরা সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে সুস্মিত শিশিরের মতো সবার মাঝে আবারও প্রকাশিত হবো।স্বতেজে। তাই, সমাজের কাছে অনুরোধ- অপেক্ষা করুন। আমাদের সময় দিন।

আমরা যা, আমাদের সেভাবেই মেনে নিন। কে কী হয়েছে- এসব উদাহরণ টেনে এনে, আমাদের কী হতে হবে- এসব বলা বন্ধ করুন। পাশাপাশি, আর কোনো হাসনাত যেন তেলহীন প্রদীপের মতো ধীরে ধীরে নিভে গিয়ে মনজু না হতে হয় সেজন্য দেখা হলেই ‘এখন কি করো’ প্রশ্নটা না করে, ‘এখন কেমন আছো?’-এ প্রশ্নটা করুন। একজন চাকরিপ্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ কখনোই বুঝতে পারবে না যে, এই যন্ত্রণার মাত্রা কতটা অসহনীয়।’

দেশসেরা গ্র্যাজুয়েট বেকারদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে হাসনাত বলেন, ‘খাবার খরচ, চাকরির অ্যাপ্লিকেশন ফি, পকেট খরচ, প্রিলি-রিটেনের বইয়ের দাম নিয়ে ভাবতে ভাবতে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে। রাত গভীর হয়,কাটাবন মসজিদের ফজরের আযান কানে আসে, মাস বাড়তে থাকে; এদিকে পাল্লা দিয়ে মুখে রুচি আর পেটে ক্ষুধা দুইটাই বাড়তে থাকে।

শুনেছি অভাবে নাকি মানুষের ক্ষুধাও বাড়ে! যে-সব বন্ধুবান্ধব ম্যাট্রিকের পর পড়াশোনা না করে বিদেশে চলে গিয়েছে, তারা এখন প্রতিষ্ঠিত। ঘর-সংসার করে থীতু হচ্ছে। বাপ-মা’কে হজ্জে পাঠাচ্ছে। এলাকায় জায়গাজমি কিনে তেজারত বাড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে ফোন উঠিয়ে তাঁদের কাছে টাকা-পয়সা চাওয়ার কথা মনে হয়।

দুই-একবার ফোন হাতে নিয়েও রেখে দেই। আত্মমর্যাদার বায়বীয় চাদরে মোড়ানো লাজুকতা ভুলে গিয়ে যখন বন্ধুদের কাছে ফোন দিইও, অপরপ্রান্তের বন্ধু থেকে নিজের সম্পর্কে যে উচ্চ ধারণা পাই, তা শুনলে যে উদ্দেশ্যে ফোন দিয়েছি সে প্রসঙ্গ আর উঠাতে সাহস হয় না। সেসব বন্ধু-বান্ধব ধরেই নিয়েছে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে আমরা এখন অর্থ, বৈভব ও জাগতিক সম্মানে বিপুলভাবে পরিতৃপ্ত।’

পড়াশোনা আর চাকরির প্রশ্নের মধ্যে মিলহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি হয়েছে এমন, পকেটে নাই টাকা, কিন্তু চারদিক থেকে অস্বস্তিকর সম্মানের ছড়াছড়ি। আসলে ফাঁকা পকেটে সম্মান বেশি হয়ে গেলে সেটা বদহজম হয়ে যায়। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর যেসব পড়িয়েছে, আর এখন চাকরির পরিক্ষায় আমাদের থেকে যা জানতে চাওয়া হচ্ছে- সেসবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।’

চলমান পরিস্থিতিতে হতাশার মেঘ ক্রমশ ঘনীভূত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটার পর একটা শুক্রবার আসে, চাকরির পরীক্ষা আসে, শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সিট পাল্টায়, পকেটের এডমিট কার্ডটা পাল্টায়, কিন্তু এমসিকিউ-এর গোল্লার-বৃত্তে আটকে থাকা কপালটা আর কলমের খোঁচায় পাল্টায় না।

কপাল কবে পাল্টাবে- সে প্রশ্নের উত্তরে আমার জীবন সন্ধানী মন এখন নিশ্চুপ। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তো বলার অপেক্ষা রাখে না। কখন কি হয়, কিছুই বলা যায় না। চলমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে ক্রমশ হতাশার নিশ্বাস ফেলতে হয়! পরিবার, সমাজ ও আশেপাশের মানুষের ‘এখন কি করো? আর কবে? আর কতদিন?’ প্রশ্নের উত্তর এড়াতে ঈদেও হলে থেকে যেতে হয়। পরিচিত মানুষের ফোন কল এড়িয়ে যেতে পারলে মনটা স্বস্তিতে ভরে উঠে।’

হাসনাত আরও বলেন, ‘নিজের কষ্ট, অসন্তোষ, রাগ কিংবা ভালোবাসা- আমরা কাউকে কিছুই এখন বলতে পারছি না, মুখ বুজে সমুদ্র গিলতে হচ্ছে! দিন যত যাচ্ছে পরিবার,সমাজ ও নিজের প্রত্যাশার পারদ ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে।

এতোদিন উড়তে থাকা আমি এবং আমার স্বপ্ন, এই সংকটে আটকে পড়ে ধুলোমলিন বেশে নিয়তির মুখোমুখি হতে চলেছে। লাগামছাড়া ব্যর্থতা ও সংকটের ত্রাহি ত্রাহি রবই শুধু নয়, আমাদের এখন সবার সামনে নিদারুণ উপহাসের পাত্রও হতে হচ্ছে। কাছে আসার ‘রঙিন দিনেরা’, ক্রমাগত দূরে যাওয়ার ধূসর বিবর্ণ গল্পে পরিণত হচ্ছে।’

অসংখ্য বেকার আত্মহত্যার চিন্তা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আর ঠিক তখন, ঠিক তখনই, জীবন থেকে মৃত্যুই পরম কাঙ্ক্ষিত বলে মনে হয়। ঠিক তখনই হাসনাতরা মনজু কিংবা রুপা কর্মকার হতে চায়। মনজু যেমন শরতের শিশিরের মতো রোদ উঠার আগেই নিঃশব্দে মিলিয়ে গিয়েছে, মনে হয়, ঠিক সেভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিভৃতে মিলিয়ে যাই। এক’পা,দু’পা করে মিলিয়ে যাওয়ার পথ ধরতে ইচ্ছে হয়। তবে, কোথাও যেন বাধা পড়ে যাই!’

তিনি বলেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার মুভিতে অপুকে বলতে শোনা যায় -তার মধ্যে মহৎ কিছু একটা করার ক্ষমতা আছে, সম্ভাবনা আছে,  কিন্তু সেটা সে পারছে না। আবার এই না পারাটাও শেষ কথা নয়, ট্রাজিডিও নয়। সে মহৎ কিছু পারছে না, তার দারিদ্র্য যাচ্ছে না, তার অভাব মিটছে না, কিন্তু এত কিছুর পরেও সে জীবনবিমুখ হচ্ছে না, সে পালাচ্ছে না, স্কিপ করছে না, মনজুর মতো আত্মহনন করছে না বরং সে বাঁচতে চাইছে, সে বলছে- বাঁচার মধ্যেই সার্থকতা, বাঁচার মধ্যেই আনন্দ। He wants to live.

এই পয়েন্টটাতে এসে আর জীবনবিমুখ হতে পারি না। আসলেই, বেঁচে থাকতে পারছি এটাই তো সার্থকতা।’

সমাজের প্রত্যাশার বাইরে এসে বাঁচতে হবে জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘একটা থেঁতলে যাওয়া ব্যাঙও মাটির সঙ্গে অর্ধেক লেপ্টে থাকা দেহটা নিয়ে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লাফানোর চেষ্টা করে, দুষ্টু ছেলের হাতে ধরা পড়ে পাখা হারানো লাল ফড়িংটাও চেষ্টা করে নীল আকাশে আবার উড়ে বেড়ানোর। আর আমি তো মানুষ, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ভয় কি? আবার শুরু করবো। সমাজ-পরিবার ও আশেপাশের মানুষের প্রত্যাশায় বেঁচে থাকা বন্ধ করে, নিজের আশার উপর নির্ভর করে বাঁচবো।

আত্মহত্যা করতে জীবন আমাকে হয়ত শত শত যৌক্তিক কারণ দেখাচ্ছে; কিন্তু আমি জীবনকে শুধু একটা কারণ দেখিয়েই বেঁচে থাকবো। আর সেটা হলো ‘আশা’। থেমে না গিয়ে এই সম্বলটুকু নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা। ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘Every man dies but not everyman lives’. মৃত্যুকে দেখিয়ে দেব আমি জীবন থেকে পালিয়ে যাইনি, যাঁরা বেঁচেছে, আমি তাদের একজন।’

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com