রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেফতার টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারত সরকারের প্রতি জি এম কাদেরের ত্রাণ সহায়তার আহ্বান ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১২২৫ বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠন হচ্ছে : আসিফ ভারত থেকে এলো ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম, পিস ৭.৫ টাকা কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই, নির্বিঘ্নে পূজা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সুদ মওকুফ করে ঋণ রিশিডিউল করার দাবি চামড়া ব্যবসায়ীদের ১০০০ আইটি ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিতে চায় জাইকা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিডি দুই জাহাজে অগ্নিকাণ্ড: নৌ-মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন অভ্যুত্থানে ১০৫ শিশু নিহত, প্রত্যেক পরিবার পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা ক্রিকেটার ছদ্মবেশে শ্রমিক নেওয়ার অভিযোগে ২১ বাংলাদেশি আটক ইসরায়েলি হামলা হলে জবাব দিতে পরিকল্পনা প্রস্তুত ইরানের সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব আমিনুল গ্রেপ্তার অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলতে চাই না: সাখাওয়াত হোসেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার প্রশ্ন সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নিতে পারবেন শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিবের ৭ দিনের রিমান্ড হেলেনা জাহাঙ্গীর-রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা

গোচারণ ভূমি ভরাট করে স্বামী-স্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিলের জমি ও গোচারণ ভূমি ভরাট করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ে তুলছেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। পাশাপাশি বিল ভরাট করে উপশহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সদ্য সাবেক এই মন্ত্রী। এই বিল সম্পূর্ণ ভরাট হলে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বন্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো শহরবাসীকে।

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের চার বারের সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনের পর সরকারের মন্ত্রিপরিষদে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ফাহিমা খাতুন ট্রেজারার।

এলাকায় চাওর আছে, এটি মূলত তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়। মূল মালিক উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী হলেও এটির নিয়ন্ত্রক তার স্ত্রী প্রফেসর ফাহিমা খাতুন।

২০২০ সালে জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকায় একটি ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এরপর বিজয়নগর উপজেলার দত্তখোলা বিল ভরাট করে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রস্তুতি চলছিল। বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ‘বিল’ বা নামা শ্রেণিভুক্ত ভূমি অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালার আলোকে শ্রেণি পরিবর্তন করে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনুকূলে বন্দোবস্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাব পাঠান।

 

পরে শ্রেণি পরিবর্তন সংক্রান্ত বিবিধ মামলা মূলে ওই ভূমির শ্রেণি ‘বিল’ বা নামা থেকে ‘পতিত’ হিসেবে পরিবর্তন করে রেকর্ড সংশোধন করা হয়। শ্রেণি পরিবর্তন করা ওই ভূমি নামমাত্র মূল্যে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রস্তাব পাঠান।

তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, বিল জলাধারের অন্তর্ভুক্ত। যে কারণে এর শ্রেণি পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় বিলটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে রিট করে। পরে আদালত ‘বিল’ বা নামা শ্রেণিভুক্ত ভূমি ‘পতিত’ হিসেবে পরিবর্তন এবং ওই ভূমি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়ার কার্যক্রম বেআইনি ঘোষণা করে রায় দেন। জনস্বার্থে ওই ভূমি আগের রেকর্ড অনুসারে ফিরিয়ে আনতে ও সংরক্ষণ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

এদিকে দত্তখোলা বিলে সরকারি জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণে ব্যর্থ হয়ে জেলা শহরের অদূরে বিজয়নগর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমানা সড়কের পাশে কয়েকজন ব্যক্তি থেকে ৫ একর কৃষি জমি কেনেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। সেই জায়গাটি স্থানীয়দের কাছে ভাতেরখলা বিল নামে পরিচিত। এটি গোচারণ ভূমি ছিল। বর্ষাকালে এই জমি পানিতে টুইটুম্বর থাকে। সেখানে আইন অমান্য করে বালি দিয়ে অধিকাংশ জায়গা ভরাট করে ফেলেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে। বিশাল এই ভূমি দখলে আইন অমান্য করলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি তখন।

এছাড়া সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইশতেহারে তিতাস নদীর পূর্বপাড়ে কৃষিজমি ভরাট করে লইস্কা বিল এলাকায় উপশহর গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন মোকতাদির চৌধুরী। নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হওয়ার পর সেই উপশহর নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছিলেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ইউনিভার্সিটির জন্য যে জায়গাটি নেওয়া হয়েছে তা মেরুড়া মৌজায় পড়েছে, এগুলো কৃষিজমি। উপশহরের জন্য তিতাস নদীর পূর্ব পাড়ে জায়গা দেখা হয়েছিল।

এই বিষয়ে নদীভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, আমরা বিল বলতে যা বুঝি, বাংলাদেশে বিস্তীর্ণ আবদ্ধ স্বাদুপানির জলাশয়কে বিল বলা হয়। বিল মূলত নিম্নভূমি যেখানে অতিরিক্ত পানি এসে জমা হয়। শুকনো মৌসুমে অধিকাংশ বিলে কোনো পানি থাকে না। তখন সেই এলাকা চাষাবাদ ও গবাদি পশুর চারণক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটু বৃষ্টি হলে বা বর্ষা মৌসুমে এসব নিম্নভূমি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত বিলের গভীরতা বেশি হয় না। বেশিরভাগ বিলই জলাভূমির মতো। তবে বড় বড় বিলের গভীরতা অনেক বেশি এবং প্রায় সারা বছর এসব বিলের কোথাও না কোথাও পানি থাকে। বিল কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাঁওড়ের সমর্থক, যদিও দুটির মধ্যে অল্প বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান।

তিনি বলেন, বিল ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এবারের বন্যা থেকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে রক্ষা করেছে বিলটি। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, পুকুর-জলাশয় সর্বোপরি পরিবেশ সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে সাবেক মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদালয়ের ট্রেজারার ও মন্ত্রীপত্নী প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় । তিনি প্রশ্ন শুনে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com