সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ফেব্রুয়ারিতেই সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা: শিক্ষা উপদেষ্টা মালয়েশিয়ায় ৭ দিন বিশেষ ব্যবস্থায় পাসপোর্ট দেবে হাইকমিশন পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল এবার ভারতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারকে তলব এসবির প্রধান হলেন গোলাম রসুল ৩৩ বছর পর জাবিতে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জোড়া ফিফটিতে সিলেটের বিপক্ষে ২০০ পার চট্টগ্রামের ৫০ পুলিশ সুপারসহ ৭৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি কর্মস্থলে যাওয়ার পথে প্রাণ গেলো ব্যাংক কর্মকর্তার রাজস্ব ও ভর্তুকির জন্য ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে: খাদ্য উপদেষ্টা বগি উদ্ধার, রাজশাহীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ শেখ হাসিনার যোগসাজসেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া: রিজভী প্লট দুর্নীতি শেখ হাসিনা-রেহানা-টিউলিপ-ববির বিরুদ্ধে মামলা লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল আরো ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, মৃত্যু বেড়ে ২৪ জমি চাষে বাংলাদেশিদের বাধা, বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের বিষয়ে আদালতকে যা বললেন হেনরী বেনজীর এবং বড় মেয়ের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ চুলা জ্বলছে না, শিল্পের অবস্থাও শোচনীয়: গ্যাস সঙ্কট আরও তীব্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ নিয়ে বিভ্রান্তি, বিএনপির দুঃখ প্রকাশ

বিসিএসে সুপারিশের ১৪ বছর পর নিয়োগ, কী বলছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা:
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

বিসিএস পরীক্ষায় মেধার সব ধাপে যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার পরও শুধুমাত্র নেতিবাচক পুলিশ রিপোর্টের কারণে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়েছে ২৫৯ জনের চাকরি। তাদের মধ্যে কেউ ১৪ বছর ধরে, আবার কেউ পাঁচ বছর ধরে চাকরির আশায় ঘুরছেন আদালত আর সরকারের বিভিন্ন দফতরে। অবশেষে দীর্ঘদিন পর সুপারিশ পাওয়া ২৫৯ জন নিয়োগ পেয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এসব প্রার্থীকে আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত পিএসসির সুপারিশক্রমে ২৫৯ জন প্রার্থীকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের প্রবেশিকা পদে জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ অনুসারে ২২০০০-৫৩০৬০ টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হলো।

এতদিন আটকে থাকলেও তাদেরকে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করতে বলা হয়েছে।

যাদের নিয়োগ আটকে ছিল তাদেরই একজন মাহবুব উল আলম। ২০১০ সালের অক্টোবরে ২৮তম বিসিএস’র চূড়ান্ত ফলাফলে তাকে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হলেও পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর তার নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।

মাহবুব আলম বলেন, আমার নামে মামলাও ছিল না, পুলিশের রিপোর্টও ভাল ছিল। এরপরও আমার নিয়োগও হয়নি।

২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত এমন বাদ পড়া সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা ছিল চার শতাধিক। বুধবার তাদের মধ্য থেকে যে ২৫৯ জনের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে বলা হয়, তাদেরকে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুসারে ২২০০০-৫৩০৬০ টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগপ্রাপ্তদের নিজ ব্যাচ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা বজায় রাখা হলেও তাদের কোনো ধরনের বকেয়া আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে না।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন সত্য। তবে যেহেতু তারা সার্ভিসে ছিলেন না বা যোগদান করেননি সে কারণে তারা বকেয়া পাবেন না।

বিসিএস পাসের ১৪ বছর পর গেজেট

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বা পিএসসির অধীনে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর। তার আগের বছর ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার।

ওই বছর বিপিএসসি চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণদের নামে গেজেট প্রকাশের জন্য তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু ওই তালিকার বেশ কয়েকজনের নাম বাদ দিয়েই চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গতকাল বুধবার ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস’এ বাদ পড়াদের নামে যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে ২৮তম বিসিএস’র আছেন সাত জন। ওই তালিকায় প্রথম নাম মাহবুব উল আলমের।

মাহবুব আলম বলেন, বিসিএস পাস করলাম। প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। অজানা কারণে বাদ পড়ার পর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি বছর আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। এখন এই হারানো সময়ের মূল্য আমি কোথায় ফিরে পাব?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্র মাহবুব আলম বিবিএস’এ চাকরি বঞ্চিত হওয়ার পর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে চাকরি করেন। পরে সে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেছেন।

ওই সময় চূড়ান্ত গেজেটে বাদপড়াদের অনেকে উচ্চ আদালতে মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট থেকে তাদের নিয়োগ দিতে রায়ও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গত ১৪ বছরেও তাদের নামে গেজেট হয়নি।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন সরকার গঠনের পাঁচ দিনের মাথায় তাদের নামে গেজেট হয়েছে।

মাহবুব আলম বলেন, তাদেরকে আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনি যোগদান করবেনও। কিন্তু তার যে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ১৪ বছর আগে সেখানে এখন যোগ দেওয়া নিয়ে বেশ কষ্টের কথাও জানান।

পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নিয়ে যত প্রশ্ন

মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশের আগে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে ‘পুলিশ যাচাইকরণ’ করে থাকে। সাধারণত এই ভেরিফিকেশন করে থাকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবি শাখা।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার থেকে গত কয়েক বছরে অন্য গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিসি অফিস দিয়েও কাজটি করা হচ্ছে বলে নিয়োগপ্রাপ্তদের অন্তত দুইজন জানিয়েছেন।

সেক্ষেত্রে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক যাচাই ফর্মে দেওয়া ১৬ ধরনের তথ্য যাচাই করা হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা কোথায় লেখাপড়া করেছেন, সর্বশেষ পাঁচ বছর কোথায় থেকেছেন, কিংবা তার বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি বা অন্য কোনো মামলায় গ্রেফতার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্য চাওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আব্দুল্লাহ আল যোবায়ের ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু চূড়ান্ত গেজেটে তাকে বাদ দেওয়া হয়। পরে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর তার নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।
কেন গেজেট হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তরে যোবায়ের বলেন, আমি কোনো রাজনীতি করি না। আমার নামে কোনো মামলা নেই। আমার বাবা এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। সে কারণে আমি ক্যাডার হয়েও বাদ পড়েছি।

যোবায়ের বর্তমানে একটি এনজিওতে চাকরি করছেন সিনিয়র স্পেশালিস্ট হিসেবে। ২০১৭ সালে তার যোগদানের কথা থাকলেও সাত বছর পর তিনি এখন যোগ দেবেন।

২৮তম বিবিএসের মাহবুব আলমের দাবি তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার রিপোর্ট পুলিশের পক্ষ থেকে যায়নি সেটি তিনি নিশ্চিত। কী কারণে তাকে বাদ দেওয়া হলো সেই প্রশ্নের উত্তরও তার কাছে অজানা।

ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে?

২৫৯ প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করার পাশাপাশি বলা হয়েছে, বাদ পড়া ওই প্রার্থীরা যোগদানের পর শিক্ষানবিশকাল অন্তত দুই বছর হবে। সরকার চাইলে এটি বাড়তেও পারে।

নির্ধারিত তারিখে যোগদান না করলে তিনি চাকরিতে যোগদান করতে সম্মত নন মর্মে ধরে নেওয়া হবে এবং এ নিয়োগপত্র বাতিল গণ্য হবেও বলা হয়েছে।

নিয়োগপ্রাপ্তরা বলছেন, মেধার সব ধাপে যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার পরও চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশের বাদ পড়েছেন শুধুমাত্র নেতিবাচক পুলিশ রিপোর্টের কারণে। যে কারণে তাদেরকে অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ নানা ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, তারা যোগদানের পর তাদের ব্যাচের নিয়োগপ্রাপ্তদের তারিখের সঙ্গেই ভূতাপেক্ষা নিয়োগ হবে। তবে তাদের বকেয়া আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে না।

গেজেট থেকে নাম বাদ পড়ার পর আদালত যে রায় দিয়েছিল সেখানে অনেকের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, বঞ্চিত হওয়ার কারণে তারা প্রাপ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন না।

সহকারী কমিশনার গেজেটে নাম যুক্ত হওয়ার পর মাহবুব আলম বলেন, এই ১৪ বছরে আমি যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলাম সেটির কোনো উত্তর আমাদেরও জানা নেই।

যদিও তাদের কেউ কেউ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।

৩৫তম বিসিএস’র যোবায়ের বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের ১৭ জনকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ ও সিনিয়রিটি দিতে রায় দিয়েছিল উচ্চ আদালত। কিন্তু প্রকাশিত গেজেটে তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এখন আমার এই পদে যোগ দেব যে বেতনে তার চেয়ে অনেক বেশি বেতন পাচ্ছি।
সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, তারা শুধু আর্থিক না, দক্ষতার দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়বেন। সামনের দিনগুলোতে এটি নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠবে। তবে সরকার এক্ষেত্রে নিজস্ব বিধি অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com