‘ভালো ছাত্র হিসেবে সুনাম ছিল রাজধানীর মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্র জোবায়ের হাসান রাফিতের (১৮)। শিক্ষকদের প্রিয় ছিল জোবায়ের। এজন্য তাকে নিয়োজিত করা হয় ক্লাস ক্যাপ্টেন।
তবে এই দায়িত্ব পালন করাই কাল হয়েছে তার। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সহপাঠী চৌধুরী রাজিন ইকবালের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে জোবায়ের। ক্লাসের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে যাওয়ায় রাজিনের হামলার শিকার হয় সে।’
পুলিশ বলছে, কলেজ অধ্যক্ষ রাজিন ও তার বাবাকে স্কুলে ডেকে আনেন এবং শাসন করেন। এ ঘটনায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে জোবায়েরকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। প্রায় এক মাস জোবায়েরের সঙ্গে ভালো বন্ধুর অভিনয় করে তার বাবার সহযোগিতায় বাসায় ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জোবায়েরকে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় কমার্স কলেজের পাশে সরকারি হাউজিং ভবনের তৃতীয় তলায় রাজিনের বাসা থেকে জোবায়েরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজিনের বাবার নাম ইকবাল আহম্মেদ চৌধুরী। তিনি পেশায় আইনজীবী। রাজিনের মা ঢাকার বাইরের একটি কলেজের শিক্ষিকা।
জোবায়ের হাসান রাফিত হত্যাকাণ্ডে তারই সহপাঠী মূল আসামি চৌধুরী রাজিন ইকবালকে (১৮) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে রাজিনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-৪-এর সহকারী পরিচালক এএসপি জিয়াউর রহমান চৌধুরী।
তিনি বলেন, গত ৬ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন ঢাকা কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী চারতলা বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় একটি ভাড়া বাসায় কলেজ শিক্ষার্থী জোবায়ের হাসান রাফিতের মরদেহ পাওয়া যায়। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ ও র্যাব-৯ এর একটি দল হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকায় অভিযান চালায় এবং চৌধুরী রাজিন ইকবালকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার চৌধুরী রাজিন ইকবালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, নিহত জোবায়ের ও গ্রেফতার রাজিন ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজিনের কাছ থেকে কলেজের শিক্ষক একটি দাবা বোর্ড বাজেয়াপ্ত করেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে সে কলেজের উপদেষ্টা বরাবর নিয়মিত শিক্ষার্থী উল্লেখ করে দাবা বোর্ডটি গ্রহণের জন্য আবেদন করে। কিন্তু জোবায়ের শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ায় আবেদনটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থী উল্লেখ করাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়।
পরবর্তী সময়ে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করা হয় এবং অভিভাবকদের কাছে বিষয়টি অবহিত ও সতর্ক করা হয়। এ ঘটনার জেরে রাজিনের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং জোবায়েরকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৬ জুলাই দুপুরে রাজিন কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী নিজ ভাড়া বাসায় কৌশলে জোবায়েরকে ডেকে আনে।
এএসপি জিয়াউর রহমান আরও বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে জোবায়ের সেখানে পৌঁছালে তাদের মধ্যকার পূর্বের বিষয়টি নিয়ে পুনরায় বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো বটি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় জোবায়েরের। রাজিন হত্যার বিষয়টি তার বাবাকে জানালে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান তিনি এবং স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানার আগেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
গ্রেফতার রাজিনের বাবা মাইক্রোবাসযোগে ছেলেকে নিয়ে হবিগঞ্জে পালিয়ে গিয়ে নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে রেখে নিজেও অন্যত্র আত্মগোপন করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ