গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তীত রয়েছে। ব্রক্ষ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও রয়েছে বিপৎসীমার ওপরে। অন্যদিকে তিস্তার পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
জেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন ও আমন বীজতলাসহ ২ হাজার ৫০০ হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব এলাকায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কমলেও ক্রমেই দুর্ভোগ-ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের।
রবিবার বিকেল ৩টায় গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৩ সেমি হ্রাসের পরও বিপৎসীমার ৭১ সেমি ও ঘাঘট নদীর পানি ১১ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ২৩ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি ১৪ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৫৯ সেমি নিচে ও তিস্তার নদীর পানি ১২ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৪ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে।
জানা যায়, অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী প্লাবিত এলাকার বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তীত রয়েছে। জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বেড়ে আবার তিন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা, এই চার উপজেলায় বন্যায় ২৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্লাবিত হয়েছে।
পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষ শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। কয়েকটি এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় লোকজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানি কমলেও দুর্ভোগ-ভোগান্তি পিছু ছাড়ছেনা বন্যা দুর্গতদের।
প্লাবিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। গো-চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা। চারিদিকে বন্যার পানি থাকায় ও টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। বন্যার পানি সঠিকভাবে না ফুটিয়ে খাওয়ার কারণে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি ও সুন্দরগঞ্জে ১১টিসহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩টি দাখিল মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা বিভাগ।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পঁচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, গাইবান্ধায় তিন নদ-নদীর পানি কমছে। এরমধ্যে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। তবে তিস্তার পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, জেলা সদর, ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনো খাবারসহ সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল, কৃষি, স্বেচ্ছাসেবক এবং লাইভস্টোক টিম রয়েছে। তাছাড়াও একাধিক এনজিও বানবাসী মানুষের সেবায় কাজ করছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস