বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: পশ্চিম নাখালপাড়ায় তিন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে৷ র্যাব বলছে, নিহতরা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল৷ হোলি আর্টিজান হামলার দেড় বছর পরও ভুয়া পরিচয়ে বাড়িভাড়া নেয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন?
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলা’র পঞ্চম তলায় তিন ‘জঙ্গি’ নিহত হন৷ এর আগে মধ্যরাত থেকে র্যাব সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রাখে৷ র্যাব বলেছে, ‘‘জঙ্গিরা আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে গুলি ছোড়ে৷ আমরাও পাল্টা গুলি ছুড়ি৷ ভোররাতে তারা নিহত হয়৷ তাদের কক্ষে অবিস্ফোরিত আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক পাওয়া গেছে৷”
র্যাব এখনো নিহতদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি৷ তবে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ ব্রিফিংয়ে জানান, ‘‘নিহতরা জেএমবি’র সদস্য এবং তারা গুরুত্বপূর্ন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল৷” তিনি আরো জানান, ‘‘ছয় তলা বাড়িটির পঞ্চম তলায় তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে৷ পঞ্চম ও ষষ্ঠ এই দুই ফ্লোরে মেস করে ভাড়াটিয়ারা থাকেন৷ সবক’টি ফ্ল্যাট মিলিয়ে ২০ জনের মতো থাকতো সেখানে৷ এর মধ্যে পঞ্চম তলার জঙ্গিরা যে ফ্ল্যাটে ছিল, সেখানে সাত জন ছিল৷ তিন জঙ্গি ছাড়া বাকিরা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়৷ তিন জঙ্গি একটি কক্ষে থাকতো৷”
তিনি বলেন, ‘‘গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জাহিদ নামের এক জঙ্গি বাড়িটি ভাড়া নেয়৷ ভাড়া নেওয়ার সময় জানিয়েছিল, সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে৷ দুই ভাইসহ সে একটি কক্ষে থাকার কথা বলে বাসায় ওঠে৷ ৪ জানুয়ারি জাহিদ একা বাসায় উঠেছিল৷ ৮ তারিখ বাকি দুইজন আসে৷ বাসা ভাড়া নেয় একটি ন্যাশনাল আইডি কার্ড ব্যবহার করে৷ সেটাকে আমরা ভুয়া বলে সন্দেহ করছি৷ তারা অন্য কারুর আইডি কার্ড ফটো কপি করে সেখানে প্রকৃত আইডিধারীর নাম মুছে দিয়ে জাহিদ নাম বসিয়ে দেয়৷”
জঙ্গিদের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহারের বিষয়টি নতুন নয়৷ গত বছরের ৮ মার্চ মিরসরাই পৌর এলাকার একটি বাসায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইনশৃংখলা বাহিনী৷ সেই বাড়িটি জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল কাপড় ব্যবসায়ী পরিচয়ে৷ ভাড়াটিয়া যে জাতীয় পরিচয়পত্রটি ব্যবহার করেছিল, তা ছিল নকল৷
১৬ মার্চ সীতাকুণ্ডে সন্ধান পাওয়া জঙ্গি আস্তানার জন্য বাসা ভাড়া নেয়া হয়েছিল একই কৌশলে৷ ব্যবহার করা হয়েছিল ভুয়া এনআইডি৷ তাদের এনআইডি যাচাই করতে গিয়েই পুলিশ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পয়৷ ঢাকার উত্তরার আশকোনা, সিলেটের আতিয়া মহল ও মৌলভীবাজারে জঙ্গিরা নিজেদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল এবং তাদের এনআইডিও ছিল ভুয়া৷ কুমিল্লার কোটবাড়িতে রনি ও খালেদ নামে দুই জঙ্গি কাপড় ব্যবসায়ী পরিচয়ে বাসা ভুয়া এনআইডি দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিল৷ গত বছরের জুলাইয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে আটক জেএমবি নেতা আইয়ুব আলী ও তার স্ত্রী সেখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিল ডিস ব্যবসায়ী পরিচয়ে৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এর আগে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এবং নীলক্ষেত এলাকা থেকে ভুয়া ন্যাশনাল আইডি প্রস্তুতকারক চক্রের সদস্যদের আটক করেছি৷ ওই চক্রটি প্রকৃত ন্যাশনাল আইডি কার্ড থেকে ইচ্ছে মতো ছবি ও ঠিকানা পাল্টে দিয়ে যত খুশি তত ভুয়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড বানাতে পারে৷ এরকম আরো অনেক চক্র আছে বলে সন্দেহ করি৷ স্ক্যান করে অথবা ফিচারগুলো নকল করে ভুয়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড বানানো এখন প্রযুক্তিগতভাবে খুবই সহজ৷ তবে এগুলো ভেরিফাই করলে সহজেই নকল ধরা পড়ে৷ বাড়িওয়লারা আমাদের কাছে এলে আমরা তা করে দিতে পারি৷”
তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভির জোহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা বাসা ভাড়া দেন তারা ভাড়াটিয়ার এনআইডি’র ফটোকপি এবং তথ্য ফর্ম থানায় পাঠান৷ থানার কাজ হলো তাৎক্ষণিকভাবে ওই এনআইডি আসল না নকল তা পরীক্ষা করা৷ সেটা যদি তারা না করেন, তাহলে এই ভাড়াটিয়ার তথ্য নেয়া তেমন কোনো কাজে আসে না৷ আর এটা পরীক্ষা করে দেখা খুবই সহজ৷ এনআইডি’র ওয়েবসাইটেই তা করা যায়৷”
মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘শুধু এনআইডি নয়, ভাড়াটিয়া তথ্যের সঙ্গে ফোন নম্বার এবং ছবিও থাকে৷ এই ফোন নাম্বার এবং ছবি দিয়েও এখন একজনের প্রকৃত নাম ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়৷”
এ বিষয়ে এনআইডি প্রকল্পের মহাপরিচালকসহ আরো দু’একজন শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে ফোন করে তাঁদের পাওয়া যায়নি৷
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ নাগারিকরা সরাসরি এনআইডি ভেরিফাই করতে পারেন না৷ অনেকের কাছেই প্রক্রিয়াটি জটিল মনে হয়৷ তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরাকারের ৮২টি প্রতিষ্ঠান এটা ভেরিফাই করতে পারে৷ আর কেউ যদি আবে,ন করেন, তাহলে এনআইডি প্রকল্প থেকেও ভেরিফাই করানো সম্ভব৷
হোলি আর্টিজান হামলা, অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের পরই ডিএমপি’র উদ্যোগে ঢাকায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়৷ কিন্তু বাড়ি এবং ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি ডিএমপি৷ এসব তথ্য দিয়ে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করার কথা৷ গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার ১৯ লাখ ৬ হাজার ৮৯৯টি পরিবারের তথ্য ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে৷
ডিএমপির উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘প্রতিনিয়তই রাজধানীতে নগরিকরা বাসা পরিবর্তন করেন৷ নতুন মানুষ আসেন৷ আবার কেউ রাজধানী ছেড়ে চলে যান৷ তাই প্রতিনিয়তই নতুন তথ্য আসছে৷ আমরা আশা করছি, শিগগিরই এই ডাটাবেজটি ব্যবহারোপযোগী করতে পারব৷”
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:ডেয়চে ভেলে/এসএস