খুলনার বটিয়াঘাটায় সজনে চুরি দেখে ফেলায় বাগান মালিক ও ঘের ব্যবসায়ী মো. আমিনুর শেখকে (৪৪) পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মো. সাঈদুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। পুলিশ সুপার দপ্তরে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ঘের ব্যবসায়ী মো. আমিনুর শেখ গাওঘরা গ্রামের মো. মালেক শেখের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- একই গ্রামের ফরিদুল্লাহ শেখ, শাহিন, নয়ন ও ফারুক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৯ মার্চ বেলা ১২টার দিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গাওঘরা গ্রামস্থ জনৈকা কৃষ্ণা প্রামাণিকের বাগান ভিটা থেকে একটি অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২০ মার্চ বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার।
এ বিষয়ে বটিয়াঘাটা থানা এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নেমে স্থানীয় ভদ্রা নদীর পাড়ে ঘেরের বেড়ার ভিতরে গোঁজা একটি রক্ত মাখা শার্ট উদ্ধার করে। এই রক্ত মাখা শার্ট এর সূত্র ধরেই পুলিশ অভিযান শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে ২০ মার্চ ভোর রাতের দিকে সন্দেহভাজন গাওঘরা গ্রামের মৃত লিয়াকত শেখের ছেলে ফরিদুল্লাহ শেখকে (২০) তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রক্ত মাখা শার্টটি তার বলে জানায় এবং ঘটনা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়।
ফরিদ স্বীকার করে, ঘটনার দিন ১৫ মার্চ সন্ধ্যা রাত সাড়ে ৭টার দিকে সে নিজে এবং শাহিন, নয়ন ও ফারুক গাঁজা সেবন করে। এরপর তারা ব্যবসায়ি আমিনুরের ঘেরের বাগানে সজনে পাড়তে যায়। হঠাৎ আমিনুর টর্চ লাইট মেরে তাদের দেখে ফেলে। তখন আমিনুর তাদের ধাওয়া দেয়; তারা সজনে ফেলে দৌঁড়ে চলে যায়।
এ কারণে তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তারা ৩ জন ওঁৎ পেতে থেকে আমিনুর ঘেরের কুঁড়ে ঘরে ঢুকতে গেলে পিছন থেকে মাফলার দিয়ে নাকে মুখে প্যাঁচ দিয়ে বেঁধে ফেলে হাত-পা ধরে ভদ্রা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর তারা আমিনুরের মৃতদেহকে তুলে পাশ্ববর্তী জনৈকা কৃষ্ণা প্রামাণিকের বাগান ভিটার ঝোপঝাড়ের ভিতর নিয়ে যায়। সেখানে একটি কালো জাতীয় কেমিক্যাল মৃত আমিনুরের শরীরে মেখে দেয়। বিষয়টি গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ আদালতে প্রদানকৃত জবানবন্দিতে স্বীকার করে।
এর উপর ভিত্তি করে বটিয়াঘাটা থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তি ও সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ঘটনায় সম্পৃক্ত শাহিন, নয়ন এবং ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহিনের হেফাজত থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত লোহার পাইপ জব্দ করা হয়। নয়ন’র হেফাজত থেকে মাফলার জব্দ করা হয়। অন্যান্য আলামত তথা যে বস্তায় সজনে ভরা হয়েছিলো সেই বস্তা, আমিনুরের রক্ত লেগে থাকা ফরিদের শার্টসহ সকল আলামত জব্দ করা হয়। মৃতদেহের কাছ থেকে ফারুকের শনাক্তকৃত লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার মো. সাঈদুর রহমান বলেন, এই হত্যাকাণ্ড ক্লুলেস হওয়ায় জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে এবং তার সার্বিক দিক নিদের্শনা ও তদারকির মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এ কারণে বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার চৌকস দল দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ