নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানার সার্বিক উৎপাদন ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময় মতো শিপমেন্ট (রপ্তানি প্রক্রিয়া) সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তারা। এতে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
শিল্পকারখানার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে সিএনজি পাম্পে এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনেক এলাকায় গ্যাস থাকছে না। রাত ১০টার দিকে গ্যাস কিছুটা থাকে বলে অনেকে এ সময় রান্না করে তিনবেলা খাচ্ছেন।
সিএনজি পাম্পগুলোতেও দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস সংগ্রহ করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। এতে মালিক-কর্মচারী উভয়েই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গ্যাসের চাপ কম থাকায় নারায়ণগঞ্জের ৪৫২টি ডায়িংসহ শিল্পকারখানায় কাজ করতে পারছেন না শ্রমিকরা। এভাবে চলতে থাকলে নিটওয়্যার এক্সপোর্ট কার্যক্রমে ধস নামবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় উৎপাদন একেবারেই বন্ধ রয়েছে। দিনে বা রাতে কোনো সময়ই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হলে বিদেশ থেকে ফেব্রিকস আমদানি করতে হবে। এতে ডলার সংকট বাড়বে, রিজার্ভ আরো কমে আসবে এবং আমদানি ব্যয় বাড়বে।’
জেলার বন্দর মদনপুরে অবস্থিত জাহিন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের টেক্সটাইল মিলসহ আশপাশের কোন কারখানায় গ্যাস নেই। শুধু শুক্রবার অল্প সময়ের জন্য গ্যাস পেলেও সপ্তাহজুড়ে গ্যাসের দেখা পাই না। গ্যাসের জন্য আমাদের কারখানার উৎপাদন প্রায় বন্ধের দিকে।
তিতাস অফিস সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের পাইপলাইনে গ্যাসের চাহিদা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট আছে।
নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাহিদা ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ন্যাচারাল বা পাইপলাইনে গ্যাসের চাহিদা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এলএনজির চাহিদা ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ন্যাচারাল গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না।
ফতুল্লা শিবু মার্কেট এলাকার পানামা টেক্স-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে প্রতি ইউনিট ১১ থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। তারপরও গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। আমাদের কারখানা কম্পোজিট প্রোজেক্ট। এখানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
গ্যাস সংকটে ডিজেল দিয়ে ডায়িং কারখানায় উৎপাদন করা গেলেও স্ট্যান্ডার্ড ও ড্রাক করা যাচ্ছে না। আর ফেব্রিকস ডায়িং করাতে না পেরে সুইং, ফিনিশিং, নিটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং সেকশনের শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় পণ্য বিদেশে রপ্তানি অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
বাংলাদেশ নিটিং অ্যান্ড ডাইং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান স্বপন বলেন, ‘গ্যাস সংকটে নারায়ণগঞ্জে ৪৫২টি ডায়িং কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার উৎপাদন ক্ষমতা বা ডায়িং ক্যাপাসিটি ৩০ টন ফেব্রিকস সে উৎপাদন করছে মাত্র এক বা দুই টন।’
বৈদেশিক মুদ্রার ৮৫ শতাংশ আয় হয় গার্মেন্টস খাত থেকে। তাই গ্যাস সংকট দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ