রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার সাবেক ওসি মাহবুবুল আলমের ঘুষ চাওয়ার সত্যতা মিলেছে। গত মাসে তার ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও ফাঁস হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডটি ওসি মাহবুবুল আলমের।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান জানান, ওই অডিও রেকর্ডটি যে মাহবুবুল আলমেরই, এটি তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠানো হবে।
গত মাসে রাজশাহীর চারঘাট থানার সাবেক ওসি মাহবুবুল আলমের ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে।
রাজশাহীর এসপি সাইদুর জানান, সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন তিনি পেয়েছেন। এটা ওসিরই কথোপকথন ছিল। এ তদন্ত প্রতিবেদন রাজশাহীর উপমহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) দিয়েছেন। যেহেতু অফিসারদের ক্ষেত্রে পুলিশ সদরদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাই তিনি এটি সেখানে পাঠাবেন। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওসি মাহবুবুল আলমের নামে এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সাহারা খাতুন নামের এক নারী। ঘুষ চাওয়ার ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি রেকর্ডও সংযুক্ত করেন তিনি। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওসি মাহবুবুলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। পরদিনই অডিও রেকর্ডের সত্যতা নিশ্চিতে একটি তদন্ত কমিটি করে দেন এসপি।
সাহারা খাতুন চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় কারাগারে আছেন।
পুলিশের কাছে দেয়া অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাকেসহ তার ছেলে রাব্বিকে চারঘাট থানার ওসি নিজের কক্ষে ডেকে নেন। এরপর তাদের কাছ থেকে ওসি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়ার পাশাপাশি অর্থ দাবি করেন।
ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’
চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক কারবারিদের ধরে মামলা দেয়ার কারণে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’
সাহারা বেগমের উদ্দেশে ওসি মাহবুবুল বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’
এরপর ওসি বলেন, ‘এখনও তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে, কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে, পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে।
‘আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। মুক্তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক কারবার) করবে।’
রাজশাহী জেলা ডিবির ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকেরও সমালোচনা করেন ওসি মাহবুবুল।
তিনি বলেন, ‘যদি আতিকের বদলি চাও, দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’
ওসিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচ লাখ আর দুই লাখ, সাত লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেয়ার দায়িত্ব আমার।
‘নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা, এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ