কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্রধারী একজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি ভাইরাল ছবিগুলো চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিনের।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে চকরিয়ায় সংঘর্ষে ফোরকানুর রহমান (৫০) নামের জামায়াতের এক কর্মী নিহত হন। মঙ্গলবার রাতে একজন ছবি ও ভিডিওগুলো ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরবর্তীতে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ বলছে, প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
২৬ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল পৌর শহরের মহাসড়ক দিয়ে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে যাচ্ছে। ওই সময় বেলাল উদ্দিনকে হেলমেট পরা অবস্থায় গুলি করতে দেখা যায়।
চকরিয়া চিরিংগ্যা এলাকার বাসিন্দা শফিক মিয়া বলেন, যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেটিতে হেলমেট পরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে যুবলীগ নেতা বেলালের শারীরিক গঠনের অনেক মিল আছে। আমাদের এলাকায় বহিরাগত কেউ এসে গুলি করার সাহস কারো নেই। সবার মুখে মুখে যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে সেটি বেলালেরই।
ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর ব্যাপারে স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র ও লাটিসোঁটা হাতে দৌড়াচ্ছেন। প্রথম সারিতে অস্ত্র হাতে চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন, পাশে ছিলেন তার ভাই প্রবাসী মিরাজ উদ্দিন। তাদের পেছনে আরও ১০-১২ জন আছেন। তাদের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরীকেও দেখা যায়। তবে পুলিশ বলছে এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে যুবলীগের নেতা বেলাল উদ্দিন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, যে ছবি ভাইরাল হয়েছে সেটি তাদের নয়। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এদিকে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় কক্সবাজারের ৬টি মামলা হয়েছে। এ ৬টি মামলায় ৪৬৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১১ হাজার ৯শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৫টি এবং চকরিয়ায় নিহত মোহাম্মদ ফোরকানের স্ত্রী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এর মধ্যে পুলিশের ৫টি মামলা বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার দায়ে। নিহতের স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, পুলিশ কোনোভাবেই গুলি করেনি। বরং পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত তিনিসহ পুলিশের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে সেগুলো আমরা বিশ্লেষণ করে চিন্তা করে আইনের আওতায় আনব। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি ।
প্রসঙ্গত, চকরিয়া পৌরসভার নামারচিরিংগা এলাকার মামা-ভাগিনার মাজার-সংলগ্ন স্থানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার সিদ্ধান্ত হয়। জানাজা পড়তে বিকেল ৪টার দিকে মানুষ মামা-ভাগিনার মাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে ফেরত আসছিলেন। ওই সময় বায়তুশ শরফ সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢোকেন চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত।
ওই সড়ক দিয়ে তাদের যেতে দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দেন এবং ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা করেন। পরে ২০-৩০ জন হেলমেট ও মুখোশ পরা ব্যক্তি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ, মুখোশ পরা ব্যক্তি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে জামায়াত কর্মী ফোরকানুর রহমান নিহত হন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ