শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫ নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তদন্ত চলছে: ফায়ারের ডিজি উন্নয়নের লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রাশিয়ার মিসাইলের আঘাতে ভূপাতিত হয় ওই বিমান শেষ দিনে ভিড় বেড়েছে, পছন্দের ফ্ল্যাট খুঁজছেন অনেকেই বিআরটিএ নির্ধারিত সিএনজি অটোরিকশার জমা ৯০০ টাকা কার্যকরের দাবি ৬ মাস ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল থাই নারীর সঙ্গে হোটেলে ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত : প্রধান উপদেষ্টা মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যসহ নিহত ২ জাহাজে ৭ খুন: বিচারের দাবিতে কর্মবিরতিতে নৌযান শ্রমিকরা পঞ্চগড়ে টানা চারদিন দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ইয়েমেনের বিমানবন্দরে হামলা, অল্পের জন্য বাঁচলেন ডব্লিউএইচও প্রধান গান পাউডার ব্যবহার হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে ‘বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ’ পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী পাবনায় দাঁড়িয়ে থাকা করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন শ্রমিক নিহত, আহত ৫ নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ ক্রীড়া পরিষদে অস্থায়ী অফিস ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যেখানে চলবে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে এক পুলিশের অনেক কাজ : ডয়চে ভেলে

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭
  • ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, মামলা গ্রহণ, বিচারে সহায়তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটোকলসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে৷ করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও৷

dhruvo2625_1331043260_3-noticeblog_1330333230_1-DW_RGB_300.gif সারা দেশে ৬৩৩টি থানার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে বাংলাদেশ পুলিশ৷ পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে পুলিশের ইউনিটগুলো হলো: রেঞ্জ পুলিশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), ব্যাটেলিয়ন পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ৷ বিভাগীয় শহরগুলোতে কাজ করে মেট্রোপলিটন পুলিশ৷ এর বাইরে পুলিশ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও পুলিশ হাসপাতাল আছে৷ বহুল আলোচিত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র‌্যাব-ও পুলিশের আন্তর্গত৷ এ রকম আরেকটি হলো আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন বা এপিবিএন৷

হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বিশেষ বিভাগ কাজ শুরু করে৷ ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’ নামের এই বিভাগটি এখন সারাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে৷ রয়েছে ‘সোয়াত’ নামের ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’-ও৷ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে তারাই মূল অভিযান পরিচালনা করে থাকে৷

এছাড়া সক্ষমতা বাড়াতে যুক্ত হয়েছে ‘কমান্ডো ইউনিট’৷ এরই মধ্যে এই ইউনিটের জন্য ৪০ জন সদস্যকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷ আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশেই শুরু হচ্ছে নিয়মিত কমান্ডো ট্রেনিং৷ পুলিশের আইজি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রথমে মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জ এবং পরে জেলা পুলিশেও পৃথক কমান্ডো ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে৷ যে ৪০ জন চৌকস পুলিশ সদস্যকে কমান্ডো ট্রেনিং দেয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন নারী সহকারী পুলিশ সুপারসহ পাঁচজন নারী সদস্য রয়েছেন৷

পুলিশ সদস্যদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এর জন্য পুলিশের আলাদা ট্রেনিং ইন্সটিটিউট আছে৷ এফবিআইসহ বিশ্বের উন্নত দেশে পুলিশ সদস্যরা প্রশিক্ষণ পান৷ আবার ঐ সব দেশ থেকে প্রশিক্ষক এসেও প্রশিক্ষণ দেন বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশ পুলিশ আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল-এর সদস্য৷ তাই পুলিশ সদর দপ্তরে আছে ইন্টারপোল ডেস্ক৷ এই ডেস্কের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ছাড়াও নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷

এর বাইরে বাংলাদেশ পুলিশে এখন ফরেনসিক, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, পোস্ট ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন, ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন, নিউ টেকনিক অফ ইনভেস্টিগেশন, কল ডায়ালিং রেকর্ড (সিডিআর), বেসিক ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ও কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এ সব প্রশিক্ষণ হয় ‘নিড অ্যাসেসমেন্ট’ করে৷

বাংলাদেশে এখন পুলিশের মোট জনবল এক লাখ ৯৫ হাজার ৫২০ জন৷ জাতিসংঘের মান অনুযায়ী শান্তির সময় নাগরিক এবং পুলিশের আদর্শ অনুপাত হলো ৪০০:১৷ কিন্তু বাংলাদেশে এই অনুপাত বর্তমানে ৮২২:১৷ আর বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের শতকরা ৭ ভাগ এখন নারী৷

১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে অংশ নিচ্ছেন৷ মিশনে নারী পুলিশ যুক্ত হয় ২০১০ সাল থেকে৷ শান্তি মিশনে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন৷ বর্তমানে জাতিসংঘের নয়টি মিশনে এক হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য কাজ করছেন৷ মিশনে তিন শতাধিক নারী পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন৷

১৯৯২ সালে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা অনুযায়ী, এসআই থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তারা ৯ এবং ৭ পয়েন্ট ৬২ বোরের পিস্তল ব্যবহার করছেন৷ অন্যদিকে বর্তমানে পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরা শটগান কিংবা চাইনিজ রাইফেল ব্যবহার করছেন৷ কিন্তু নতুন এক প্রস্তাবে এসআই থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের ৯.৪, ০ পয়েন্ট ৪৫, ০ পয়েন্ট ৪০ বোরের পিস্তল ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে৷ থ্রি নট থ্রি (৩০৩) রাইফেল দিয়ে পুলিশের যাত্রা শুরু হলেও, পুলিশ এখন আর এই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না৷ প্রচলিত যানবাহনের বাইরে অপরাধ ও সহিংসতা বন্ধে এখন ‘আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার’ বা এপিসি ব্যবহার করছে পুলিশ৷

তবে পুলিশের বিশেষ ইউনিটে যাঁরা কাজ করেন, সেই সদস্যদের হাতে ভারি অস্ত্রের পাশাপাশি ‘কর্নার শটগান’ নামে একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা চলছে৷ এ অস্ত্রের বিশেষত্ব হলো, শত্রুকে না দেখেও যে কোনো অবস্থান থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে টার্গেট করা যায়৷ শটগানের আকৃতির এ অস্ত্রে ‘মনিটর’ লাগানো থাকায় দূর থেকে শত্রুপক্ষকে চিহ্নিত করা সহজ হবে বলে মনে করছে পুলিশ সদরদপ্তর৷ এছাড়া পর্যায়ক্রমে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের হাত থেকে লাঠি তুলে নেয়ার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছে৷

পুলিশের অপরাধ

পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ অবশ্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়েন৷ এই অপরাধ কখনো হয় দায়িত্ব পালনের সময়, আবার কখনো দায়িত্ব পালনের বাইরে গিয়েও অপরাধ করার অভিযোগ আছে৷

২০১৬ সালে প্রায় ১৩ হাজার ৬শ’ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধ ও অপকর্মের অভিযোগ আনা হয়৷ এর সবগুলো ঘটনাই ঘটেছিল পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেলে৷ এরপর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ হাজার ১শ’ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে খবর৷ এ সব অভিযোগ বেশিরভাগই কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে৷ এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তদন্ত হয়৷

সদর দপ্তরে কর্মরত পুলিশের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগই বেশি৷

পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেলের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭২১টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এই মামলাগুলোতে ৭৯৮ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ এদের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই পুলিশের বিরুদ্ধে মোট ১২৮টি মামলা দায়ের হয়৷ অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পাঠায়৷ এতে ২০১২ সালের ১৫৬টি, ২০১৩ সালের ১০টি, ২০১৪ সালের ৫৩টি, ২০১৫ সালের ৭৩টি এবং ২০১৬ সালের ১৬টি অভিযোগ রয়েছে৷

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ সব অভিযোগের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে গুমের৷ যার সংখ্যা ২৭টি৷ এর বাইরে ২৪টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের৷ পুলিশি হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ২০টি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ক্রসফায়ারের অভিযোগ রয়েছে ১২টি, ৭টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর৷ এখানেই শেষ নয়৷ সঠিক তদন্ত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে চারটি, জমি ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগ রয়েছে চারটি, চারটি অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজির আর ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে দু’টি করে৷ এছাড়া ঘুস, অর্থ আদায়, লুটপাট, গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার ও ভূমি দখলের অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে৷

অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিক জামালউদ্দিন মনে করেন, ‘‘পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক৷ কিন্তু সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা না পেলে মানুষ অসন্তুষ্ট হয়৷ এরপরও অবশ্য বিপদে মানুষ পুলিশের কাছেই ছুটে যায়৷ তবে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে৷ পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এখন নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে৷ মানবাধিকারেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ তাছাড়া পুলিশের কনেস্টবল পর্যায়েও এখন মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা যোগ দিচ্ছেন৷”

তিনি এও বলেন, ‘‘পুলিশের কেউ কেউ এখনও হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত৷ আগে জিডি করতেও টাকা লাগত৷ তবে এখন পরিস্থিতি অনেকেটা পাল্টাচ্ছে৷ থানায় জিডির জন্য ছাপানো ফরম আছে৷ সেটা পূরণ করলেই হলো৷ অবশ্য মামলার বাদি এবং আসামি – উভয় পক্ষের কাছ থেকেই অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে৷”

বাজেট বৃদ্ধি

পুলিশে জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দও বাড়ছে৷ ২০০১-০২ অর্থবছরে বাজেটে পুলিশের জন্য বরাদ্দ ছিল ৯০০ কোটি টাকা৷ সেই বাজেট ২০১৬-১৭ সালে হয়েছে সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা৷ পুলিশে মোট ১৩ ধরনের বেতন স্কেল আছে৷ সর্বনিম্ন একজন পুলিশ কনেস্টবলের বেতন স্কেল ৯ হাজার টাকা আর সর্বোচ্চ পুলিশের আইজির বেতন ৮২ হাজার টাকা৷ পুলিশের আইজি পদটি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার৷

পুলিশের কাজ

অপরাধ দমন এবং তদন্তই পুলিশের প্রধান কাজ৷ আর এ কাজ করতে গিয়ে পুলিশকে মামলা গ্রহণ, মামলার তদন্ত, আসামি গ্রেপ্তার, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল এবং বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে হয়৷ পুলিশের অভিযোগপত্রের ওপরই মামলার বিচারের ফল বহুলাংশে নির্ভর করে৷ আদালতে যদি তদন্ত অনুযায়ী সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা না যায় তাহলে মামলা প্রমাণ এবং অপরাধীকে শাস্তি দেয়া কঠিন৷ তাই বিচার ব্যবস্থার সাফল্য পুলিশের সাফল্যের ওপরও নির্ভর করে৷

কিন্তু এই প্রধান কাজের বাইরে পুলিশকে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করতে হয়৷ দেশে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশের বড় একটি জনশক্তি ব্যস্ত থাকে৷ আইন প্রয়োগের চেয়ে আইন অমান্যকারীদের নিবৃত্ত করতেই পুলিশকে অনেক শক্তি খরচ করতে হয়৷ এর বাইরে ভিআইপিদের নিরাপত্তা, প্রটোকল, স্থাপনার নিরাপত্তার কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয় পুলিশকে৷

সাধারণত সিআইডি বড় ধরনের অপরাধের তদন্ত করে৷ থানা-পুলিশের বাইরে এই সংস্থা সরাসরি তদন্ত কাজেই নিয়োজিত৷ নতুন প্রতিষ্ঠিত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশকে এফবিআই-এর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে৷ এসবি আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছাড়াও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের নিয়ে কাজ করে৷

শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশে বলতে গেলে নুতন৷ এরা বিশেষায়িত৷ বিশেষ ধরনের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত এরা৷ আর ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের চলাচল সুশৃঙ্খল করার দায়িত্ব ছাড়াও ট্রাফিক আইন ও মটর ভেহিকেল আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা আদায় এবং শাস্তি দেয়ার কাজ করে৷ ট্রাফিক পুলিশে এখন নারীরাও কাজ করছেন৷ গত বছরের আগস্ট মাস থেকে ২২ জন নারী সার্জেন্ট স্কুটি নিয়ে ঢাকার রাস্তায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন৷

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশ কম৷ তার ওপর পুলিশকে অপরাধ দমন এবং মামলার তদন্ত ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে হয়৷ তাই জনগণের প্রত্যাশা অনুয়ায়ী হয়ত আমরা সেবা দিতে পারি না৷ তবে আমরা চেষ্টা করি৷ আর এখন আমরা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছি৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশে যদি কেউ অপরাধ করে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত দায়৷ এর দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না৷ পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে পুলিশ সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিটে সেই অভিযোগ করার ব্যবস্থা আছে৷ অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ হলে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা, এমনকি ফৌজদারি মামলাও দায়ের করি৷”

পুলিশের মাঠ পর্যায়ের ইউনিট থানার প্রধান হলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি৷ থানাতেই প্রধানত মামলা দায়ের ও তদন্ত হয়৷ দেশের একাধিক থানার ওসি হিসেবে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর ইনতেজার রহমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ না জনগণের, না ডিপার্টমেন্টের৷ পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলা যেন একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷ কোনো পুলিশ সদস্য ভালো কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়লে পুলিশ বিভাগ দায়িত্ব নেয় না৷ ফলে পুলিশকে অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়৷”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পুলিশের আধুনিকীকরণ এবং সক্ষমতা বাড়াতে সরকার একটি পরিকল্পনা দিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে সারা দেশে কাউন্টার টেরোরিজম ও পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট গঠন৷ পুলিশ এভিয়েশন ইউনিট, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয় পুলিশ নিয়োগ ও ডিজিটালাইজড ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা৷ পাশাপাশি যুগোপযোগী তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ, উন্নতমানের অস্ত্র ও গাড়িসহ লজিস্টিক সাপোর্ট, গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রযুক্তিগত তদন্ত ব্যবস্থার প্রসার, ভবন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন৷ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশে নেয়া হচ্ছে নতুন আরও ৫০ হাজার জনবল৷ পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে অত্যাধুনিক অস্ত্র, প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ, দেশে ও বিদেশে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ব্যবহারেরও অনুমতি প্রদানের কথাও ভাবা হচ্ছে৷

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশকে একটি সত্যিকারের পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে৷ তাদের ‘ফাংশনাল অটোনমি’ দিতে হবে৷ বাংলাদেশ পুলিশ চলে বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন দিয়ে৷ কিন্তু আমি মনে করি পুলিশের জন্য একটি স্বতন্ত্র আইন প্রয়োজন৷ সেই আইনের খসড়াও হয়েছিল, কিন্তু সেটা সেভাবেই পড়ে আছে৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে কাজ করতে হলে তার প্রশিক্ষণ, যানবাহন, সরঞ্জাম ইত্যাদি প্রয়োজন৷ এগুলো তার স্বাধীন এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার অন্যতম শর্ত৷ আমি আইজিপি থাকাকালে পুলিশ বিভাগের সংস্কারের জন্য অনেক কাজ হয়েছিল৷ তার অল্প কিছু বাস্তবায়নও হয়েছে৷ তবে অধিকাংশই পড়ে আছে সরকারের কাছে৷”

ব্রিটিশ পুলিশ থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের জন্ম৷ ১৮৪০ সালে ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশ এলাকায় যে পুলিশি ব্যবস্থা চালু করে, তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশীয়দের দমনপীড়ন করা৷ তাদের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা৷ পাকিস্তান আমল পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশের পুলিশ এখন ভিন্ন মাত্রার৷

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনী রাজারবাগে প্রথম প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলে৷ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ৩০৩ রাইফেল নিয়ে৷ তাই এই পুলিশ স্বাধীন দেশের পুলিশ৷ তাঁরা জনগণের বন্ধু হবে, এটা আশা করাই তো স্বাভাবিক৷

বাংলা৭১নিউজ/ডয়চে ভেলে/এসএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com