ভোটাধিকার নিশ্চিত এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়তে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে বুধবার (৭ জুন) দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন, কর্তৃত্ববাদী ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সরকার মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধগুলোকে ভূলুষ্ঠিত করে রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেশে গণতন্ত্রহীনতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। প্রশাসনে চলছে দলবাজির প্রতিযোগিতা। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলীয় ক্যাডারে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সুপ্রিম কোর্ট বারসহ সব পেশাজীবী সংগঠনসমূহের নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশের ছায়ায় অন্যায়, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রের সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। এই চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। সংবিধানের মূল ভিত্তি ‘জনগণের মালিকানা’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ মুহূর্তে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই।
সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন মাঠ পর্যায়ে আরও জোরদার ও তীব্রতর করে জনবিরোধী এ সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। চরম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পতিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে মেরামত করতে, আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি দেশপ্রেমিক জাতীয় সরকার গঠনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে কার্যকরভাবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুদৃঢ় করতে হবে।
৭ দফা দাবিগুলো হলো-
১. দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২. খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান এবং নির্বাহী প্রধান হতে পারবে না। একই ব্যক্তি পর পর দুবারের বেশি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
৪. সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
৫। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৬. সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। গণবিরোধী ডিজিটাল নিরপত্তা আইনসহ সব নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
৭. তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মূলোৎপাটন করতে হবে। খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু,বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী ও মহাসচিব আব্দুল কাদের প্রমুখ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ