বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ইরাক ও ইরানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১৩৫ জন নিহত হয়েছেন।
দুই দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে রোববার রাতে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর ফলে ব্যাপক ভূমিধস হওয়ায় উদ্ধারাভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
টুইটারে পোস্ট করা ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ইরাকের উত্তরাঞ্চলে সুলাইমানিয়ায় একটি ভবন থেকে আতঙ্কিত লোকজন ছুটে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ভবনের জানালাগুলো ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। সুলাইমানিয়ার পাশের দারবান্দিখান শহরে বেশ কিছু অবকাঠামো ও প্রাচীন ধসে পড়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবির ওয়েবসাইটে পোস্ট করা সবশেষ তথ্যমতে, রোববার রাতের এ ভূমিকম্পে ইরানের অঞ্চলে নিহত হয়েছেন ১২৯ জন। তবে হতাহতের আরো খবর পাচ্ছেন তারা। এতে আরো বলা হয়েছে, তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৭ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে ইরাকি অঞ্চলে নিহত হয়েছেন ছয় জন।
ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর মোস্তবা নিকেরদার বলেছেন, ‘আমরা তিনটি জরুরি ত্রাণশিবির খোলার প্রক্রিয়ায় রয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ইরাকি কুর্দিস্তানের হালাবজা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রোববার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সাধারণত এ সময় অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে থাকে।
ইরানের জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান পির হোসাইন কুলিভান্দ বলেছেন, ‘সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় উদ্ধারকারীদের পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না… ব্যাপক ভূমিধস হয়েছে।’
এ ভূমিকম্পে কেরমানশাহ প্রদেশের কাসর-ই-শিরিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগালেহ শহরেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রেড ক্রস জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে তারা ৩০টি দল পাঠিয়েছে।
ইরাকের কর্মকর্তারা বলেছেন, সুলাইমানিয়া প্রদেশে ছয় জন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ প্রদেশের দারবান্দিখান শহরের মেয়র নাসে মোল্লা হাসান নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৫ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে প্রায় ২০ সেকেন্ড এবং অন্যান্য শহরে আরো বেশি সময় কম্পন অনুভূত হয়।
ইরানের তাব্রিজ শহরসহ বেশ কয়েকটি সীমান্ত শহরে কয়েকবার পরাঘাত (আফটারশক) অনুভূত হয়। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। দিয়ারবাকির শহরে লোকজনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে এসে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
অ্যারাবিয়ান ও ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের মধ্যবর্তী ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ফল্ট লাইন জুড়ে এ ভূমিকম্প হয়েছে। এই ফল্ট লাইন পশ্চিম ইরান ও উত্তর-পূর্ব ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
১৯৯০ সালে কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী ইরানের উত্তরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়, আহত হয় প্রায় ৩০ হাজার। ঘরবাড়ি হারায় প্রায় ৫ লাখ মানুষ। কয়েক মহূর্তের ভূমিকম্পে ডজনখানেক শহর ও দুই শতাধিক গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এর ১৩ বছর পর ইরানের বাম শহরে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। মাটির তৈরী বাড়ির জন্য বিখ্যাত বাম।
এরপর ইরানে ২০০৫ সালে ভূকিম্পে প্রায় ৬০০ জন এবং ২০১২ সালে ভূমিকম্পে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়। সম্প্রতি তুর্কমেনিস্তান সীমান্তবর্তী ইরানে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দুজন নিহত হয়।
বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র: বিবিসি অনলাইন