রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার ও তার বিভিন্ন সংস্থার অবহেলাকে দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, কী দুর্ভাগ্য এ দেশের যে এত উন্নয়ন, চতুর্দিকে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। অথচ অগ্নিনির্বাপণের জন্য যে আধুনিক ব্যবস্থা করা দরকার সেই ব্যবস্থা এখানে নেই।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, বেশ কিছুদিন আগে সেখানে (বঙ্গবাজার মার্কেটে) সিটি করপোরেশন এটাকে ঠিক নিরাপদ নয়… এই ধরনের ঘোষণা দেয়। এরপর সেখানে খালি করার জন্য তাদের (বঙ্গবাজার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের) বলেছে যে এটা (মার্কেট) ঠিক করা উচিত। কিন্তু নো-বডি টেকেন ইন্টারেস্ট.. কারও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।
তিনি বলেন, একটা কাঠের স্ট্রাকচার বলা যায় সেটা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রেখে সরকার বলুন, সরকারের যেসব সংস্থা আছে যারা এসবের দায়িত্ব রয়েছে তারা বা সিটি করপোরেশন- কেউ কিন্তু এই দায়িত্বটা পালন করেনি। আমরা মনে করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদাসীনতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতি, নজরদারির অভাবের কারণে এই ধরনের ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সিদ্দিকবাজারে কিছুদিন আগে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে ২১ জনের প্রাণ গেছে। এখানে (বঙ্গবাজার মার্কেট) আল্লাহর রহমতে কারও প্রাণ যায়নি। কিন্তু যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা ভয়ংকর। এই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো অথবা সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছেন, ঈদের আগে যখন ব্যবসায়ীরা তাদের সর্বস্ব পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।
তিনি বলেন, গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটি সভায় এই বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। সভায় বঙ্গবাজারসহ সব মার্কেটে অগ্নি নির্বাপণ ও সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে যে কাজগুলো ফায়ার সার্ভিস করতে পারে সেই ইকুইপমেন্টস তাদের নেই। এটা ফায়ার সার্ভিসের দোষ না। এটা হচ্ছে যারা সরকার চালাচ্ছে, যারা এরজন্য দায়ী তারা জনসাধারণের সেবার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার সেটাকে তারা গুরুত্ব দেয় না। তাদের গুরুত্ব হচ্ছে কোন জায়গায় তারা কমিশন বেশি পাবে, কোন জায়গায় তাদের টাকা উপার্জন বেশি হবে- তাদের প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) সেই জায়গায়। আমরা মনে করি, এটার জন্য দায়ী সরকার। এই দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
জার্মানির ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি র্যাবের ওপর একটি ডকুমেন্টারি করেছে ডয়েচে ভেলে। এটা খুব সেনসিটিভ হওয়ার কারণে আমাদের দেশের বেশিরভাগ পত্রিকায় কোনো নিউজ করেনি, কেউ বলেনওনি। সেনসিটিভ হলেও এটা বাস্তবতা। ডয়েচে ভেলে করেছে। এই ডকুমেন্টারির বিরুদ্ধে নেগেটিভ কোনো কিছু, যে অস্বীকার করা.. সেটা কিন্তু আসেনি।
তিনি বলেন, এই ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে যে, অনির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই কাজগুলো করছে। সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে মানবাধিকার বিরোধী, সংবিধান বিরোধী এসব কাজ করছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানান তিনি।
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, যুগ্ম সচিব আজিজুল হক কিন্তু বাইরে থেকে যাচ্ছেন। অথচ তার নির্দেশে র্যাব গেছে সুলতানা জেসমিনের বাসায়। উনি (আজিজুল হক) বাসা চিনিয়ে দিয়েছেন। কোনো মামলা ছাড়া এতো বড় বেআইনি কাজ সরকারের একজন যুগ্ম সচিব কীভাবে করতে পারেন- এটা আমাদের প্রশ্ন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন তিনি নরসিংদীর আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। তার বাসার সঙ্গে দলীয় কার্যালয়। সেখানে গতকাল (বুধবার) জেলা কমিটির সভা ডাকা হয়…। জেলা সদস্যরা উপস্থিত হয়ে দেখতে পান যে, কার্যালয়ে তালা লাগানো, চারদিক থেকে পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে। সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে কার্যালয়ের যান এবং মিটিং শুরু করেন। মিটিংয়ের শেষের দিকে কিছু লোক পুলিশের ছত্রছায়ায়… দুইটি পুলিশ তারা মাঝখান দিয়ে এসে আক্রমণ করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে জানালা-দরজা ভেঙে পড়ে। ককটেল মিটিংয়ের মধ্যেও এসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে মিটিং পণ্ড হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক দল তার জেলা কার্যালয়ে সভা করবে- এটা তার সম্পূর্ণ সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার বার বার চিৎকার করে বলছে, আমরা গণতন্ত্রের জন্য কোনো বাধা দিচ্ছি না কোথাও। নরসিংদীর ঘটনাই প্রমাণ করে তারা বাধা দিচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের সামনে কী করে দুষ্কৃতকারী কার্যালয়ে ঢুকলো এবং সভা পণ্ড করে দিলো।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নরসিংদীর পুলিশ প্রশাসন তারা প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী, আইন বিরোধী। আমরা বাধ্য হবো এসব ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
বুধবার রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জের ৫নং সড়কে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সভাপতি আবু হোরায়রা, সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু ও সহ-দপ্তর সম্পাদক আনোয়ারের ওপর হামলায় ছাত্রলীগকে দায়ী করে দোষীদের গ্রেফতার দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ